সমীরণ বিশ্বাস : সকলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। নিয়ম মেনে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করি, তৈল-চর্বি এবং মিষ্টিযুক্ত খাবার পরিহার করি। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ ক’রে থাকি, তার সবগুলো খাবার কিন্তু পুষ্টিমান বিবেচনায় উপযুক্ত নয়। করোনাকালীন এই মহা দুর্যোগে আমাদের নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে হলে অবশ্যই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। বেশি-বেশি শাক-শবজি, দেশী মৌসুমি ফলমূল নিয়মিত খেতে হবে। এ সময় অ্যালকোহল এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
সর্দি-জ্বর, গলা ব্যথা বা কাশি হলে নিতে হবে নিচের কিছু ঘরোয়া পথ্য বা পদ্ধতি: গরম চা, গরম দুধ, কফি, গ্রিন টি পান করুন। তেজ পাতা, এলাচি, লং, দারুচিনি একটি পাত্রে পানিতে লেবুসহ ফুটিয়ে গরম বাষ্প বারবার নাক দিয়ে টানুন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন। তেজপাতা, এলাচি, লং এবং দারুচিনির গরম পানি চায়ের মতো করে বারবার পান করুন।
মনে রাখবেন, আসল কথা হচ্ছে মনোবল। মনোবল হারালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। তাই আপনার মনোবল চাঙ্গা রাখা আবশ্যক; যেহেতু বিশ্বে এখনো কোনো কার্যকর করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। যাওবা ২/১টি ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো ট্রায়াল আকারে করোনা রোগীকে দেয়া হচ্ছে। করোনাকালীন এ মহাদুর্যোগে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। বিশেষ করে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি ক’রে খান। এই ভিটামিনগুলো মানবদেহে করোনাসহ বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম জিংক ধান আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, সহায়তা করেছে হারভেস্ট প্লাস। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮টি জিংক-সমৃদ্ধ জাত আবিষ্কৃত হয়ে মাঠে চাষ এবং উৎপাদনরত আছে। একজন মানুষ যদি দৈনিক তিন বেলা জিংক চাউলের ভাত খায়, তবে তার শরীরে আর জিংকের অভাব থাকে না। ফলে করোনার মতো ভাইরাস প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে মানবদেহে। আমাদের দেশে মায়েরা ৫৭%, স্কুলগামী ছেলে-মেয়েরা ৪৪% এবং ৫ বছরের নিচের শিশুরা ৩৬% জিংকের অভাবে রয়েছে।
ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। দেশের সকল মানুষ যদি জিংক চাউলের ভাত খায় এবং বেশি বেশি শাকসবজি, দেশী মৌসুমি ফলমূল নিয়মিত খায়। তবে, করোনার মতো বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম হবে আমাদের শরীর।
ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এবারের পালা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়া এবং বাংলাদেশকে খাদ্য ও পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ক’রে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখা।
এখন চলুন জেনে নেয়া যাক, করোনাকে দূরে রাখতে এমন ১০টি খাবার সম্পর্কে জেনে নিই:
(১) সবজি: করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপ্ল/লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি। (২) শাক: যে কোনো ধরনের ও রঙের শাক। (৩) ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, আনার, তরমুজ, জলপাই, আনারস ইত্যাদি। (৪) মশলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ। (৫) বীজ জাতীয়: শিমের বীচ, মটরশুঁটি। (৬) টক দই: শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। (৭) চা: গ্রিন টি, লাল চায়ে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। (৮) সামুদ্রিক মাছ: এগুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে। (৯) উচ্চ মানের আমিষ: এ জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম, দুধ, মুরগির মাংস ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। (১০) বার্লি, ওটস, লাল ও জিংক ধানের চাল, আটা, বাদাম।
লেখক: কোঅর্ডিনেটর, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড সীড প্রোগ্রাম, সিসিডিবি।