বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ব্যাপকহারে বাড়ছে জলডুগি আনারসের চাষ

শহীদ আহমেদ খান (সিলেট): সিলেটের গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে আনারসের চাষ শুরু হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে আনারস চাষের ফলে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। ফলে দিনদিন অত্র উপজেলায় আনারসের চাষ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৯ সালের শুরুর থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার পরিবারের সদস্যদের যৌথ সহযোগিতায় উপজেলার দত্তরাইল গ্রামে তাদের নিজ বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে আনারস চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেন । তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ শত শতাংশ জমিতে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার  ‘জলডুগি’ আনারসের চারা রোপণ করেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে জলডুগি আনারসের চারা ক্রয় করে এই টিলা ভূমিগুলোতে রোপন করা হয়েছিল। জলডুগি আনারসের বিশেষত্ব  হলো এটি আকারে ছোট, কিন্তু স্বাদে মিষ্টি, গন্ধেও চমৎকার। সাধারণত প্রচলিত আনারসের চেয়ে ফলন আসে দ্রুত। ক্ষেতের সব আনারস পাকেও প্রায় একসঙ্গেই। ক্যামিক্যাল বিহীন ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যে এ চাষা শুরু করেন তারা। এই আনারসের আরেকটি গুনাবলি হলো এটি পাকলে হলুদ ও লালচে রং ধারণ করে। আকর্ষণীয় রংয়ের কারণে ক্রেতার চাহিদা বৃদ্ধি সাথে সাথে অনেক সময় মৌসুম শুরুর আগে বাজারে তোলা সম্ভব হয়। চাহিদা ও গুণগত মানের কারণেই প্রাথমিকভাবে নিজ জমিতে এ চাষাবাদ শুরু করেছেন তারা। বর্তমান মৌসুমে এ জমি থেকে লক্ষাধিক আনারস বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এ মৌসুমে ক্ষেত থেকে দৈনিক গড়ে ১০ হাজার পিস বিক্রি করা যাবে বলে জানান তারা।

সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়া পরিবারের সদস্য, অন্যতম উদ্যোক্তা কাওছার রাজা রতন -এর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, দীর্ঘদিন আগে আমরা যখন শ্রীমঙ্গল বেড়াতে যাই তখন সেখানে অনেক আনারসের বাগান দেখতে পাই। এগুলো দেখে নিজের মধ্যে অনেক শখ জাগে। আমাদের এলাকায় যদি এরকম বাগান তৈরি করা যায়। সেই আলোকে আমাদের পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে থাকি। এই শখ আর এলাকার মানুষকে ফলের চাহিদা পূরণ করতে আমাদের বাড়ির পরিত্যক্ত ভূমিতে বনজ গাছ কেটে এ আনারস চাষের উদ্যোগ গ্রহন করি। এতে শুধু ফলের চাহিদা নয় বরং ক্যামিক্যাল মুক্ত ফল নিজে এবং এলাকার মানুষ সংগ্রহ করতে পারবে। এ বছর  মহামারীতে দেশের সংকটে চিন্তিত তারপরও আমরা আশাবাদী সঠিকভাবে ফল সংগ্রহ এবং বিক্রি কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ভালো লাভ হবে। আমাদের মত যাদের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জমি রয়েছে তারা যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে বাণিজ্যকভাবে ফলের চাষাবাদ শুরু করেন  তখন দেখা যাবে দেশে ফলের ঘারতি পূরণ হবে। সেই সাথে দূর হবে বেকারত্ব সমস্যা।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার খায়রুল আমিন এ ব্যাপারে আলাপকালে জানান,  গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আনারসের চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আগ্রহী চাষীদের সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হয়। তিনি পতিত ভূমিতে শুধু আনারস নয়, বিভিন্ন ফল চাষের ব্যাপারে উপজেলা অফিসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।

This post has already been read 4489 times!

Check Also

কলাপাড়ায় পাটজাতীয় ফসলের আঁশ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাটজাতীয় ফসলের আঁশ …