শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

কয়রার পানিবন্দি ৪২ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : ঘরের চার পাশে পানি। সে পানিতে এখন বিকট গন্ধ। ঘরেও টিকতি পারিনে। আবার পানিতি নামলিও গায়ে পায়ে চুলকানি শুরু হয়। এর মধ্যি ছোট ছাওয়ালডার তিন দিন ধরি পাতলা পায়খানা। পানির মধ্যি ডাক্তারও আসেনা। পাশের বাড়ির এক দাদাকে বইলে সেলাইন আনাই খাবাইছি। পাঁচ বছরের সন্তান পার্থ মন্ডলের অসুস্থতার মধ্যে নিজের অসহায়ত্ব এভাবেই প্রকাশ করলেন খুলনার কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের গৃহবধূ মাধবী মন্ডল।

একই গ্রামের সালমা বেগম বলেন,প্রায় এক-দ্যাড় কিলোমিটার দূর তে পানি নে আসি। তাও জোয়ারের সময় ডুবি যায়, ভাটা নাগলি কলসি নে যায়। খাবার পানির কষ্টর কথা বলি শেষ করা যাবে না। খাবার পানির কষ্ট সবসময় হলিও এখন তা একশ গুণ বৃদ্ধি পেয়িছে। ভিজে-পুড়ে পানি নে আসতি হয়।’ খাবার পানি কোথায় পান, জানতে চাইলে এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলেন । এ অবস্থা শুধু কয়রার নয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া উপকূলের প্লাবিত এলাকার ৪২টি গ্রামে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে করে এরই মাঝে এসব অঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ।

মাধবী,সালমার পরিবারের মত কয়রা উপজেলায় পানিবন্দি ৪২ গ্রামের অনেক বাড়িতেই এখন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও চিকিৎসক সংকটেও ভুগছেন তারা। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা জানিয়েছেন পানিবন্দী গ্রামগুলিতে তাদের ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং কোথাও চিকিৎসা সংকট নেই।

একই গ্রামের অর্চনা তরফদার বলেন, ঘরের চারপাশের পানিতে নোংরা আবর্জনা জমে বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে মেয়েরা কিছু মুখে তুলতে পারছে না। কিছু খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। এক ছেলে মোবাইলে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ কিনে খেয়েছে।

দেখা গেছে, এলাকায় চলচলের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক সবখাইে কোমর পানি। ঘর থেকে বাইরে যেতে হলে নৌকা অথবা ভেলার প্রয়োজন হচ্ছে। ভাটার সময় পানি কমলে পানি একটু কমে। তখন পা মেপে মেপে বাজারে যায় গ্রামের অনেকেই। সেখানে স্বাস্থ্য কর্মীদের পৌঁছানো দায়। যে কারনে চাইলেও দূর্গত এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা সদর থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন দুটিতে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। তাদের মাঝেও চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। ওই এলাকায় খাবার পানি ও ঘরগৃহস্থালি কাজে ব্যবহাযোগ্য পানির সংকট তীব্র হয়েছে। ফলে ব্যাধ্য হয়ে তারা নোনাপানি দিয়েই ঘরগৃহস্থালির কাজ সারছেন। এতে নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

উত্তরবেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম জানান, তার ছেলে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। তার নিজের হাত ও পায়ে চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ভিজে ভিজে এ অবস্থা হয়েছে। চারপাশে পানি থাকায় কোনও হাসপাতালে যেতে পারেননি তিনি।
একই চিত্র দেখা গেছে মদিনাবাদ, ঘাটাখালি, গোবরা, দশহালিয়া, গোলখালি, জোড়শিং, হরিয়ারপুর, গাববুনিয়া গ্রামগুলিতে। সেখানে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়া এবং সর্দি-জ্বরসহ পানিবাহিত নানা রোগে।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদীপ বালা বলেন, দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় ওই পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের মেডিকেল টিমের মাধ্যমে এলাকাবাসির মধ্যে সচেতনা বড়াতে কাজ করছি। সেই সাথে নৌকায় করে পানিবন্দী এলাকায় খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, দূর্গত এলকায় যাতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব না ছড়াতে পারে সেজন্য স্বাস্থ্য কর্মীদেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পানিবন্দী এলাকাগুলোতে সার্বক্ষনিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

This post has already been read 3059 times!

Check Also

সারা দেশে পলিথিন কারখানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঘোষণার অনুযায়ী রবিবার (০৩ …