ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে দেশের এক মাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্রে করমজল পযেন্টে এবার মা কুমির “পিলপিল এবার ৪৪টি ডিম দিয়েছে। শুক্রবার বিকালে পুর্ব সুন্দরবনের করমজল প্রজনন কেন্দ্রে এ ডিম দেয়। আগামি ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এ ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার কথা রয়েছে। বাচ্চা ফোটানোর জন্য ২১ টি ডিম কুমিরটির নিজস্ব বাসা, ১২টি ডিম কেন্দ্রের পুরাতন ইনকিউবেটরে ও ১১ টি নতুন ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে।
প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মো. আজাদ কবির জানান, করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৯৫ টি বাচ্চা কুমির রয়েছে। এর মধ্যে বড় কুমির রয়েছে ৬টি। কেন্দ্রের পুকুরে প্রজননের জন্য দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। বাকী কুমিরগুলো কেন্দ্রের প্যানে রেখে লালন পালন করা হচ্ছে। বংশ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিলুপ্ত প্রায় নোনা পানির এ কুমিরগুলোকে পরবর্তিতে বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন নদ নদীতে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানায় তিনি।
গত ২৯ মে অপর মা কুমির “জুলিয়েট ৫২ ডিম পেড়েছিল। প্রতি বছর প্রজনন মৌশুম মে ও জুন মাসে এ কুমির দুইটি ডিম পাড়ে। গত বছর মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ডিম দিলেও তা থেকে কোন বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়নি বলে জানায় এ বন কর্মকর্তা। গত মে মাসের শেষ দিকে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের মা কুমির ‘জুলিয়েট’ ৫২টি ডিম দিয়েছে। করমজল প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে ‘জুলিয়েট’ কুমির এ ডিম দেয়।
উল্লেখ, সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র। বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রজনন কেন্দ্রেটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ থাকা অবস্থায় ১২ বছরে কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৭২৩টি ডিম থেকে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৪৬৫টি বাচ্চা। সুন্দরবন বিভাগ জানায়, জেলেদের জালে আটক ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রেটির প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। তৎকালীন কুমির লালন-পালন ও বন্য প্রাণীর ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বন বিভাগ তাদের দুজন কর্মকর্তা নির্মল কুমার হাওলাদার ও আ. রবকে এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষনের জন্য প্রেরন করে। প্রশিক্ষন শেষ করে আ. রব এই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রের কোনো কুমির অথবা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়নি বনবিভাগ।