শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

একজন প্রান্তিক চাষি জাহাঙ্গীর মিয়ার গল্প

কৃষক জাহাঙ্গীর মিয়া।

তানজিয়া সুলতানা: কৃষিপ্রধান এই বাংলাদেশের জন্ম  লগ্ন থেকেই মানুষ কৃষিনির্ভর। তবে বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে এসে মানুষ কিছুটা কৃষি থেকে সরে আসলেও গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের ও বেশি মানুষ কৃষিকাজকে জীবিকার্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়।

মজার বিষয় হলো দিন বদলের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে ও এসেছে আমূল পরিবর্তন।

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহারের ও প্রসার ঘটছে। এতে করে ফসলের উৎপাদন হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তাছাড়া বর্তমান সরকার ও কৃষির উন্নয়নের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।কৃষকরা যাতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফসল উৎপাদন করতে পারে তাই কৃষকদের বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

আজ আপনাদের সামনে এমন একজন মানুষের কথা উপস্থাপন করবো। যিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি মৎস্য চাষ ও করে থাকেন। তার নাম জাহাঙ্গীর মিয়া।

জাহাঙ্গীর মিয়ার নিজের তিনকোনি জমি, তিনটি গরু, তারমধ্যে একটি গাই, একটি আবাল আর একটি বাঁছুর। তাছাড়া একটি ভেড়া ও আছে।

স্বল্প পূঁজির কারণে তিনি অন্যের সাথে শেয়ার থেকে পুকুরে মাছের চাষ করেন। ছোটবেলা থেকেই নাকি জাহাঙ্গীর মিয়ার মাছের প্রতি দূর্বলতা রয়েছে। অর্থাৎ তিনি মাছ ধরতে ও খেতে খুব ভালোবাসতেন। তাই মাছের ব্যবসার সাথে নিজেকে বেশিরভাগ সময় রাখতে বেশি পছন্দ করেন।

জাহাঙ্গীর মিয়া খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ শেষ করে তিনি তার গরুর যত্ন নেন।তারপর গ্রামের সকালের বাজারে যান সেখানে দুই ঘন্টা মাছের ব্যবসা করেন।তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তার নিত্যদিনের তরকারি ও টুকিটাকি খরচ চলে।বাজার থেকে এসে সকালের নাস্তা করে মাঠে চলে যান গরুর জন্য সবুজ ঘাস কাটতে।

জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী জুমু আক্তার ও তার মতই কর্মঠ।তিনি ও হাস- মুরগি লালন পালন করেন।এতে করে বাচ্চাদের ডিম কিনে খাওয়াতে হয় না।

জাহাঙ্গীর মিয়ার চার সন্তান যাদেরকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন।দুই ছেলে লেখাপড়া করে,বাকী দুই ছেলের এখনো লেখাপড়ার বয়স হয়নি।বড় ছেলে দশম শ্রেণি তে পড়ে এবং দ্বিতীয় জন জে এস সি পরিক্ষার্থী।লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা মায়ের টুকিটাকি কাজে তারাও সহযোগীতা করে।

জাহাঙ্গীর মিয়ার জমিতে বছরে তিনবার ধান চাষ করেন।ইরি, বুরো ও আমন।ফলে তাকে আর চাল কিনে খেতে হয় না।বরং তিনি আরো বিক্রি করেন।

জাহাঙ্গীর সাহেব প্রত্যকবার জমি চাষ করার আগে জমিতে জৈব সার হিসেবে গরুর বিষ্টা অর্থ্যাৎ গোবর দেন।গত বৈশাখে তিনি বিয়ার-২৮  ধান ঘরে তুলেন।অন্য সবার চেয়ে তার ধান পরিমানে বেশি হয়।যদিও তিনি অন্য সবার মত ইরি ধান লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যে গুটি সার,পটাশ ও সাবু সার দিয়েছেন।যেহেতু সারগুলো জমির পরিমাণ অনুযায়ী দিতে হয়,তাই জাহাঙ্গীর মিয় তার জমিতে গুটি সার ২৫ কেজি,পটাশ ১০ কেজি, সাবু সার ২০ কেজি দিয়েছিলেন।তবে ফলন ভালো হওয়ার কারণ তিনি জমিতে প্রতিনিয়ত গোবর দেন, এতে জমির উর্বরতা বাড়ায়,আরঅন্য সব কৃষক তাদের গোবর দেন না।

জাহাঙ্গীর মিয়া এবার তার জমি থেকে ডেমি ধান কাটছেন।ডেমি বলতে ধান কাটার কিছুদিন পর ওখানে আবার নতুন করে ডেম দিয়ে যে ধান হয় তা ডেমি ধান নামে পরিচিত।

সন্তানের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ তার এ কর্মের উপরই চলে।

আমার দৃষ্টিতে জাহাঙ্গীর মিয়া একজন সফল কৃষক হতো যদি তিনি তার পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পেতেন।

উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পেলে শুধু জাহাঙ্গীর মিয়া নয় আমাদের দেশের প্রতিটি কৃষক পেত তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন।

This post has already been read 2541 times!

Check Also

 বরিশালের বাবুগঞ্জে বিনা ধান১৭’র মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): বরিশালের বাবুগঞ্জে বিনা ধান২৩’র মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ জেলার বাবুগঞ্জ …