নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোকে বীজে কম মুনাফা অর্জন করার অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ ও এদেশের কৃষকেরাও বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এটি মোকাবিলায় সরকার কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভর্তুকিসহ নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এবছর কৃষকের ক্রয় ক্ষমতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাইব্রিড ধান বীজ, ভুট্টা বীজ ও সবজি বীজসহ অন্যান্য বীজে কম মুনাফা অর্জন করার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোকে কৃষকের সেবায় কৃষির সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী সোমবার (২২ জুন) সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত বিরাজমান পরিস্থিতিতে ‘বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও বিপণন নিরবচ্ছিন্ন রাখা’ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে অনলাইন সভায় এ কথা বলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান।
মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং সকলের সহযোগিতার ফলে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের অসহনীয় দুর্যোগের মাঝেও লক্ষ্যমাত্রার অধিক বোরো ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে আউশ ধান বীজ, আমন ধান বীজ ও পাট বীজ কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে আউশ ধান আবাদ কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। আশা করা যায়, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আউশেও বোরোর মতো ভাল ফলন পাওয়া যাবে।
শুরুর দিকে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি বাজারজাতে কিছু সমস্যা থাকলেও এখন তেমন সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, মোটামুটি ভাল দামেই চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছে। পাশাপাশি, আমসহ মৌসুমি ফলেরও ভাল দাম পাচ্ছে কৃষক।
করোনার কারণে দেশের এই ক্রান্তিকালে আসন্ন আমন মৌসুমে উৎপাদন বাড়ানো এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমন ধান আবাদের এলাকা বোরোর চেয়ে বেশি হলেও উৎপাদন অনেক কম। একমাত্র উচ্চফলনশীল জাতের গুণগতমানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা ১৫-২০% বৃদ্ধি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমন ও রবি মৌসুম সামনে, সেখানে অনেক শাক-সবজি, ভুট্টা, ডাল, তৈলসহ উফশীধান ও হাইব্রিড ধান বীজের প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য, স্থিতিশীল খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য গুণগতমানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতে কৃষি মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, করোনার প্রকোপের শুরু থেকেই কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থাসমূহ এবং সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের যে সম্ভাবনা রয়েছে, আশা করা যায়, বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না।
সভায় জানানো হয়, এবারই সরকার প্রথম বীজে ভর্তুকি প্রদান করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় হতে বিএডিসি’র ১৯,৫০০ মে. টন আমন ধানবীজ চাষী পর্যায়ে বিক্রয়ের জন্য ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। বিএডিসি তাদের ঘোষিত নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ১০ টাকা কম দামে উফশী আমন ধানবীজ ও হাইব্রিডের ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ৫০ টাকা কম দামে চাষী পর্যায়ে বীজ বিক্রি করেছে।
এ অনলাইন সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (বীজ) আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সংস্থাপ্রধানগণ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. এস. এম নাজমুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হেমনাথ ভান্ডারি এবং সুপ্রিম সীড, এসিআই, এমএম ইস্পাহানি, ব্র্যাক, ইউনাইটেড সীড, মল্লিকা সীড, লাল তীর সিড, সিনজেনটা, বায়ার ক্রপস, পারটেক্স এগ্রো, মেটাল সীড প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ সংযুক্ত ছিলেন।