নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। আজ (বৃহস্পতিবার, ২৫জুন) সকাল ১১টায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সভায় অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। সভার শুরুতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মোহাম্মদ নাসিম ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উৎপল চন্দ্রের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। দুজনেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন খাদ্য সচিব ডক্টর মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।
সভার শুরুতে মন্ত্রী Modern Food Storage Facilities Project সহ অন্যান্য প্রোজেক্টের কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নিকট জানতে চান। খাদ্যমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় আশুগঞ্জ, মধুপুর, ময়মনসিংহে যে তিনটি সাইলো নির্মাণের কাজ চলছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন এবং অতি শীঘ্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
সভায় উপস্থিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বলেন Covid-19 এর কারণে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। Modern Food Storage Facilities Project এর প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ প্রকল্পের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে হয়। করোনা মহামারীর কারণে এ সমস্ত যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাই কাজের গতি কিছুটা কমেছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন প্রকল্পের চলমান সার্বিক কার্যক্রমে খাদ্যমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য Action Plan থাকা দরকার। একটা স্ট্রাটেজিক প্ল্যান এবং রোডম্যাপ থাকা দরকার। কোন কাজ কখন, কোন সময়ের মধ্যে করতে হবে তা সুস্পষ্টভাবে থাকতে হবে।
মন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের আরসি ফুড, ডিসি ফুডদেরও খাদ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিটি প্রকল্পের কাজ মনিটরিং করার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, DPP অনুসারে কাজগুলো হচ্ছে কিনা সেদিকে প্রকল্প পরিচালকদের পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরও লক্ষ রাখতে হবে যাতে কাজের কোয়ালিটি ভালো হয়।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে ল্যাবরেটরী স্থাপন করার কথা তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী এর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান। ইতিমধ্যেই পাঁচটি বিভাগে পাঁচটি ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানান সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এ পাঁচটি বিভাগে প্রতিটি ল্যাবরেটরির একতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া সভায় সারাদেশে ২০০ টি প্যাডি সাইলো নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ত্রিশটি প্যাডি সাইলো নির্মাণের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
এর আগে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় মন্ত্রী বলেন, FPMU এর মিটিংএ ৮লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল বিধায় কৃষক তার ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। সরকার যদি এখন ধান কেনা বন্ধ করে দেয় তবে ধানের বাজার মূল্য পড়ে যাবে; কম করে হলেও মন প্রতি ১০০ টাকা কমে যাবে- জানান তিনি। চালকল মালিকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তি মোতাবেক সঠিক সময়ের মধ্যে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সরকারিভাবে চালের মূল্য বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ সময় যারা সরকারকে সহযোগিতা করবে ভবিষ্যতে চালের সরকারি মূল্য যখন বেশি থাকবে; তখন এ সমস্ত মিল মালিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সাবধান করে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের অসহযোগিতা এবং অতি লোভের কারণে যদি সরকারকে আমদানিতে যেতে হয় তাহলে আপনাদের জন্য তা সুখকর হবে না।
Modern food storage facilities projectএর পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের মধ্যে ‘সারাদেশে ১.৫ লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ’, ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্প’, ‘সারাদেশে পুরাতন খাদ্যগুদাম অনুষঙ্গিক সুবিধাদির মেরামত এবং অবকাঠামো নির্মাণ’, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা সহ সমন্বিত রাইস মিল নির্মাণ’, ‘Institutionalization on Food Safety in Bangladesh for Safer Food’ ইত্যাদি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।