শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

মাটিতে বসে খাবার খাওয়ার বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা

সমীরণ বিশ্বাস : গবেষণায় দেখা গেছে টেবিল-চেয়ারে বসে খাবার খেলে পেট ভরে ঠিকই, কিন্তু শরীরের কোনও মঙ্গল হয় না। বরং নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। অন্যদিকে মাটিতে বসে খেলে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে শরীরও রোগ মুক্ত হয়। বোল্ডস্কাই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিচে মাটিতে বসে খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো।

একাধিক আসন

মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমরা নিজেদের অজান্তেই একাধিক আসন, যেমন- সুখাসন, সোয়াস্তিকাসন অথবা সিদ্ধাসন করে ফেলি। ফলে মাটিতে বসে খাওয়ার সময় পেট তো ভরেই সেই সঙ্গে শরীর ও মস্তিষ্ক, উভয়ই ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

শরীর শক্তপোক্ত হয়

মাটিতে বসে খাওয়ার অভ্যাস করলে থাই, গোড়ালি এবং হাঁটুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শিরদাঁড়া, পেশি, কাঁধ এবং বুকের ফ্লেক্সিবিলিটিও বাড়ে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরে সচলতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানাবিধ রোগও দূরে থাকে।

হজম ক্ষমতার উন্নতি হয়

বাবু হয়ে বসে খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি হয়। তাই যাদের বদ হজমের সমস্যা রয়েছে বা যারা প্রায়শই গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন তাদের ভুলেও টেবিল চেয়ারে বসে খাওয়া উচিত নয়। পরিবর্তে মাটিতে বসে পাত পেরে খাওয়া উচিত। আসলে বাবু হয়ে বসে খাওয়ার সময় আমরা কখনও আগে ঝুঁকে পরি, তো কখনও সোজা হয়ে বসি।এমনটা বারে বারে করাতে হজম সহায়ক ডায়জেস্টিভ জুস’র ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে হজম প্রক্রিয়া খুব সুন্দরভাবে হতে থাকে। এখানেই শেষ নয়, মাটিতে বসে থাকার সময় আমাদের শিরদাঁড়ার নিচের অংশে চাপ পরে ফলে স্ট্রেস লেভেল কমে গিয়ে সারা শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

আয়ু বৃদ্ধি পায়

মাটিতে বসে খেলে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে কোনও ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছিল যারা কোনও সাপোর্ট ছাড়া মাটিতে বসে থাকতে থাকতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরতে পারেন, তাদের শরীরে ফ্লেক্সিবিলিটি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়। আর যারা এমনটা করতে পারেন না, তাদের আয়ু অনেকাংশেই হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, এই গবেষণাটি ৫১-৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে করা হয়েছিল।

ব্যথা কমে

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমরা মূলত পদ্মাসনে বসে থাকি। এইভাবে বসার কারণে পিঠের, পেলভিসের এবং তল পেটের পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে সারা শরীরের কর্মক্ষমতা এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে সব ধরনের যন্ত্রণা কমে যেতে সময় লাগে না।

ওজন কমে

মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমাদের ভেগাস নার্ভের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে পেট ভরে গেলে খুব সহজেই ব্রেনের কাছে সে খবর পৌঁছে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। এমনটা যত হতে থাকে তত ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কাও কমে। প্রসঙ্গত, আমাদের পেট ভরেছে কিনা সেই খবর ব্রেনের কাছে পৌঁছালেই আমাদের খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়। আর এই খবর মস্তিষ্ককে পাঠায় ভেগাস নার্ভ।

হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

হাঁটু মুড়ে বসে থাকাকালীন শরীরের উপরের অংশে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে হার্টে কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে হ্রাস পায় কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

সারা শরীরে রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটে

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়াটা জরুরি। যত এমনটা হবে, তত রোগের প্রকোপ কমবে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

আর যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে বাবু হয়ে বসে থাকাকালীন সারা শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের চলাচল বেড়ে যায়।

স্ট্রেসের মাত্রা কমে

শুনতে আজব লাগলেও একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাটিতে বসে থাকলে শরীর এবং মস্তিষ্কের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে মানসিক অবসাদ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রেসর মাত্রাও কমতে শুরু করে।

লেখক: কো-অর্ডিনেটর, কৃষি ও বীজ কর্মসূচি, সিসিডিবি, ঢাকা।

This post has already been read 3609 times!

Check Also

পাবনায় বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৪ পালিত

পাবনা সংবাদদাতা: “উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যের অধিকার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় …