নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): বরিশাল অঞ্চলে চলতি আউশের আবাদ সর্বকালের শীর্ষে। ছয় জেলার এ অঞ্চলে কৃষকের মাঝে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। মৌসুমের শুরুতেই চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে যত্ন-আত্তির কাজ। প্রণোদনা, বীজ সহায়তার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চাষিরা এতে উৎসাহিত হয়েছেন। সে সাথে ধানের আশানুরূপ বাজারমূল্য এ অর্জনের অন্যতম কারণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের(ডিএই) তথ্যমতে, এবার ২ লাখ ৪২ হাজার ৫ শ’ ৯৬ হেক্টর জমিতে আউশধান আবাদ হয়েছে, যা লক্ষমাত্রার শতকরা ৯৯.৩২ ভাগ।এর মধ্যে বরিশালে ১৮ হাজার ৬ শ’ ৪০ হেক্টর, পিরোজপুরে ১৭ হাজার ১ শ’ ৩৫ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ১৪ হাজার ২ শ’ ৬৫ হেক্টর,পটুয়াখালীতে ৩৭ হাজার ৯ শ’ ৭৬ হেক্টর, বরগুনায় ৫৫ হাজার ৮ শ’ ২৫ হেক্টর এবং ভোলায় ৯৮ হাজার ৭ শ’ ৫৫ হেক্টর জমি। গতবছর (২০১৯-২০২০) আবাদের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৫ শ’ ২৫ হেক্টর। গতবারের তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি।
এ অঞ্চলের ৬২ হাজার ৬ শ’ ৬৯ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির মাঝে প্রণোদনা হিসেবে প্রত্যেককে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির জন্য ৫ কেজি হারে উফশী জাতের আউশের ধানবীজ, সে সাথে ২০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার সময়মত বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৪ হাজার ২ শ’ ৬৫ জন চাষিকে মোট ৭৫.৮ মেট্টিক টন বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে এ অঞ্চলে বিগত বছরগুলোতে আউশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ, মনিটরিং, পরামর্শ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আউশ আবাদে কৃষকের যথেষ্ট আগ্রহ বেড়েছে। তাদের মধ্যে সচেতনতাও সৃষ্টি হয়েছে বেশ। ভালো বীজ ব্যবহার, সঠিক সময়ে চারা লাগানো, লাইনে রোপণ, পরিচর্যা এবং রোগপোকা দমন এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ চাষির পছন্দের জাত হচ্ছে ব্রি ধান৪৮। উচ্চফলনশীল অন্যান্য জাতের মধ্যে বিআর২১, বিআর২৬, ব্রিধান২৭, ব্রিধান৫৫, ব্রি ধান৮২, বিনা ধান-১৪, বিনা ধান-১৯ অন্যতম। সরকার এবং কৃষকের প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় এবার শস্যের গড় ফলনও বাড়বে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়। যদিও ফলন ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৪৮ মে. টন। সে হিসেবে এ বছর দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্যভান্ডারে যোগ হতে যাচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ১ শ’ ১৯ মে. টন আউশের অতিরিক্ত চাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, চৌদ্দ অঞ্চলের মধ্যে বরিশালে আউশের লক্ষমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। আমরা এর প্রায় শতভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলে বিদেশফেরত, পোশাক শিল্পের চাকরি হারানো শ্রমিক এবং বেকার মানুষ আউশ আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ মহামারীর মধ্যেও কৃষক-কৃষিবিদ সবাই মাঠে আছি।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে করোনাপরবর্তী খাদ্য নিশ্চিতকরণে বরিশাল অঞ্চলের বাড়তি উৎপাদন বিরাট ভূমিকা রাখবে ইনশা-আল্লাহ।