শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

কৃষি যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহারে রক্ষণাবেক্ষণের ভূমিকা

মোহাম্মদ আবু সাঈদ : এদেশের কৃষকবহুকাল ধরে পশু শক্তি আর কঠিন শ্রমের বিনিময়ে লাঙ্গলের ফলায় মাটি খুড়ে অগভীর কর্ষণেজমি চাষ করে আসছিল। চাষাবাদে ব্যবহার যোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা বিভিন্ন কারণে কমে যাওয়া এবং লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষে কর্মদক্ষতা কম ও শ্রমঘন কাজ হওয়ায় বর্তমানে এদেশে বিকল্প যান্ত্রিক শক্তি হিসেবে জমি কর্ষণের প্রায় শতভাগই দখল করে নিয়েছে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর নামক কৃষি যন্ত্র।জমি কর্ষণ ছাড়াও আমাদের দেশে ফসল চাষাবাদে যেসব কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে সেচ কাজে অগভীর নলকূপ, গভীর নলকূপ ও এলএলপি, বেড তৈরী সহ বীজ বপনের জন্য পাওয়ার টিলার চালিত বেড প্লান্টার,ধান লাগানোর জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, আগাছা পরিস্কার করার জন্য হস্ত চালিত উইডার ও মেকানিকাল উইডার, ফসল কাটার জন্য বিশেষ করে ধান ও গম কাটার ক্ষেত্রে হার্ভেস্টার এবং ফসল মাড়াই এ মাড়াই যন্ত্র অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ পাওয়ার টিলার ও ৩৫০০০ ট্রাক্টর জমি চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ৬০,০০০ পাওয়ার টিলার আমদানি করতে হয় যার অধিকাংশই আসে চীন থেকে। কৃষি কাজের ধরন ও প্রয়োজন অনুসারে এই বিপুল সংখ্যক কৃষি যন্ত্র গুলোতে সাধারণত ডিজেল ইঞ্জিন (কিছু ক্ষেত্রেপেট্রল ইঞ্জিন) ক্ষমতার উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, বিএডিসি এর তথ্য অনুসারে সেচ কাজে প্রায় ১৬ লক্ষ অগভীর নলকূপ, সাড়ে৩৭ হাজার গভীর নলকূপ ও প্রায় ২ লক্ষ এলএলপি ব্যবহৃত হয় যার প্রায় ৭৮.৫৯ ভাগ ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত হয়।

কৃষি যন্ত্রপাতিকে যথাযথ কর্মক্ষম রাখতে এবং লাভ জনক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রাত্যাহিক, সাময়িক ও দীর্ঘ মেয়াদী এবং প্রয়োজন মাফিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এর বিভিন্ন পদ্ধতির কার্যোপযোগীতা যাচাই এবং ক্রটি বিচ্যুতি থাকলে তার প্রতিকার করাকে যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ বলে। কৃষি যন্ত্র্রপাতি ধুলা,বৃষ্টিতে বা কাদাময় পরিবেশে বেশি ব্যবহার করা হয় বলে এর পরিচর্যার ধরণটাও অন্যান্য যন্ত্রপাতি থেকে একটু ভিন্নতর।কৃষি যন্ত্রপাতির সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দেখা যায় প্রতি নিয়তই কোন না কোন পার্টস ভেঙ্গে গিয়ে যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এর পরিচর্যা খরচ বেড়ে যায় এবং আয়ুও কমে যায়। সুতরাংএইসব কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে সময়মত যথাযথসর্বোচ্চ কাজ করতে চাইলে বা দীর্ঘদিন ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সেবা পেতে কৃষি যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিনের দৈনন্দিন (Daily), সাময়িক (Periodic) ও বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণ (Annual Maintenance) করা প্রয়োজন।

দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে প্রতিদিন ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে ডিপ স্টিকের সাহায্যেঞ্জিনেরই ক্র্যাংককেসে লুব্রিকেটিং অয়েলের পরিমান পরীক্ষা করতে হবে। এ স্টিকে নিম্ন ও উচ্চ মাত্রা নির্দেশক দুটো দাগ থাকে।অয়েলের মাত্রা এ দু’টো দাগের মাঝামাঝি থাকা ভাল। কম বা বেশি উভয় পরিমান অয়েলই ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকারক। জ্বালানি ট্যাংকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে সঠিক গুনাগুন বিশিষ্ট জ্বালানি ছাকনির মাধ্যমে ট্যাংকে ভরতে হবে। জ্বালানির সাথে যেন ধূলা, ময়লা বা পানি মেশানো না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। রেডিয়েটরে পানির মাত্রা পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুসারে পরিষ্কার ও স্বাদু পানি সংযোজন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই আইরন যুক্তটিউবওয়েলের পানি রেডিয়েটরে দেওয়া যাবে না। এয়ার ক্লিনারে নির্দ্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত অয়েল আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। অয়েলের পরিমাণ কম হলে এটি ঠিকমত কাজ করবে না। বেল্টের টেনশন বা টান টান অবস্থা ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে বেল্টের মাঝখানে চাপ দিলে যদি এর বিচ্যুতি ২ সেমি. এর বেশি হয় তবে টেনশন পুলিরসাহায্যে বেল্টের টেনশন বাড়াতে হবে। টায়ারে বায়ুর চাপ ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।বায়ুর চাপ চাষাবাদের জন্য ১২.৫ হতে ১৫.৫ ঢ়ংর হতে হবে এবং পরিবহনের জন্য ২০.০ হতে ২২.৫ ঢ়ংর হতে হবে। ডান ও বাম উভয় টায়ারে বায়ুর চাপ সমান হওয়া উচিত। কম বা বেশি বায়ু চাপের কারণে টায়ারের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ইঞ্জিনের নাট-বোল্ট এবং অন্যান্য অংশের নাট- বোল্ট ঢিলা আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে তা টাইট করে দিতেহবে।

নির্দিষ্ট কার্যঘণ্টা পর পর পাওয়ার টিলারে যে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তা সাময়িক রক্ষণাবেক্ষণ। নতুন পাওয়ার টিলারের ক্ষেত্রে ৩০ ঘণ্টা নো লোডে চালানোর পর লুব্রিকেটিংঅয়েল অবশ্যই পরিবর্তন করতে হয় এবং প্রতি ২৫ ঘণ্টা অন্তর ট্রান্সমিশন ও রোটারী কেসের অয়েল পরিবর্তন করা, এয়ার ক্লিনার পরীক্ষা করে পরিষ্কার করা ও বেল্টের টেনশন পরীক্ষা করে এডজাষ্ট করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ৫০ কার্যঘণ্টা অন্তর পেছনের চাকার এক্সেল ও বল বিয়ারিং এ গ্রীজ দিতে হবে, টেনশন পুলিতে গ্রীজ দিতে হবে ও ট্রান্সমিশন ও রোটারী কেসের অয়েলের মাত্রা পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন অয়েলযোগ করতে হবে। প্রতি ১০০ কার্যঘণ্টা অন্তর জ্বালানি ফিল্টার ও লুব্রিকেটিংঅয়েল ফিল্টার পেট্রোল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা,রোটারী ট্রান্সমিশন চেইনের টেনশন পরীক্ষা করে এডজাষ্ট করা ও ইঞ্জিনের ভাল্ভ ক্লিয়ারেন্স পরীক্ষা করে ম্যানুয়েল অনুযায়ী এডজাষ্ট করা। প্রতি ৩০০ কার্যঘণ্টা অন্তর লুব্রিকেটিং অয়েলপরিবর্তন করা। ওয়েলসাম পরিষ্কার করে নতুনলুব্রিকেটিং অয়েল ভর্তি করা, ট্রান্সমিশন ও রোটারী কেস ডিজেল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নতুন অয়েল ভর্তি করা, সিলিন্ডার হেডের নাট পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে নির্দেশিত র্টক পর্যন্ত এঁটে দিতে হবে,সাইলেন্সারে জমে থাকা কার্বন পরিষ্কার করা এবং প্রয়োজনে জ্বালানি ফিল্টার, লুব্রিকেটিং অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা।

এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য ফুয়েল ট্যাংক থেকে জ্বালানি এবং রেডিয়েটর থেকে পানি বের করে উভয়ের নীচে জমে থাকা ময়লা পরিস্কার করে রাখতে হবে। চেইন বা বিয়ারিং খুলে তৈলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হবে যেন মরিচা না পড়ে।অফ সীজনে থাকা অবস্থায় সমস্ত কৃষিযন্ত্রপাতি ভালভাবে পরিস্কার করে- সে সব পার্টস খুলেসেগুলোতে ভাল করে মবিল দিতে হবে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন স্টেশনারী পার্টস গুলোতেভাল মানের গ্রীজ দিয়ে একটু উচুঁ জায়গায়ছাওনির নীচে বড় পলিথিন বা ত্রিপল দিয়ে ভালভাবে ঢেকে রাখতে হবে। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের ক্ষেত্রে গ্রেইন ট্যাংক, থ্রেসিং সিলিন্ডারও চালুনিতে রয়ে যাওয়া সমস্ত ধান, খড় ও অন্যান্য ময়লা ভালভাবে পরিস্কার করে রাখতে হবে-তা নাহলে ধান খেতে ইঁদুর আসবে এবং মেশিনের তার কেটে নষ্ট করে রাখবে। পরবর্তী সিজনে মেশিন চালু করার সময় অযথা অর্থের অপচয় হবে। সেলফ স্টার্টিং মেশিনের ক্ষেত্রে যেমন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ট্রাকটর ইত্যাদি অফ সীজনে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন অবস্থায় ৭-১০ দিন পর পর এবং একটু পুরাতন হলে প্রতি সপ্তাহে এক বার অবশ্যই ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ১০-১৫ মিনিট চালু করে রাখতে হবে।

নতুন ইঞ্জিন বা পাওয়ার টিলার কিনে আনার পর তার পরিচালনা পদ্ধতি জানা খুবই জরুরি। এই সময় সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম মেনে ইঞ্জিন পরিচালনা করলে ইঞ্জিনের আয়ুস্কাল বেড়ে যায় এবং সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া যায়।নতুন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে পাওয়ার টিলার) লোড ছাড়া প্রতি গিয়ারে ১ ঘণ্টা করে মোট ৬ ঘণ্টা চালাতে হবে। এরপরে ১ম ও ২য় গিয়ারে রোটারির গভীরতা ৫-৬ সে.মি দিয়ে ৪ ঘণ্টা করে চালাতে হবে। ৩য় ও ৪র্থ গিয়ারে ১২-১৫ মণ ওজনের লোড দিয়ে ৪ ঘণ্টা করে চালাতে হবে। পরিশেষে ৫ম ও ৬ষ্ঠ গিয়ারে ২০-২৫ মণ ওজনের লোড দিয়ে ৪ ঘণ্টা করে চালাতে হবে। এই ভাবে নতুন ইঞ্জিন মোট ৩০ ঘণ্টা চালানোর পর অবশ্যই লুব ওয়েল ফেলে দিতে হবে।আমাদের অধিকাংশ কৃষক ভাইয়েরা না জানার কারণেই হোকবা উদাসীনতার কারণেই হোক সবচেয়ে বড় ভুল করে এখানেই। নতুন পাওয়ার টিলার কেনার পরে উপরোক্ত নিয়মে ইঞ্জিন চালায় না এবং ৩০-৫০ ঘণ্টা ইঞ্জিন চালানোর পর ইঞ্জিনের সাথে থাকা লুব ওয়েল ফেলে দেয় না। এর ফলে ইঞ্জিনের আয়ুস্কাল অনেকাংশে কমে যায়। কারণ নতুন ইঞ্জিনের চলমান অংশের ঘর্ষনের ফলে ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া ধাতব পদার্থের চিকন গুড়া লুব ওয়েলের সাথে মিশে ওয়েলসামে জমা হয়। এই লুব অৃেয়েল ফেলে না দিলে পিস্টন, সিলিন্ডার, লাইনার সহ চলমান বা ঘূর্নায়মান অংশের ক্ষয় প্রাপ্ত হবে যা ইঞ্জিনের মারা´ক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নতুন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রথম ৩০ ঘণ্টা চালনার পর লুব্রিকেটিংঅয়েল অবশ্যই অবশ্যই ফেলে দিতে হবে।

অভিজ্ঞতা বা গবেষণায় দেখা গেছে মাঠ পর্যায়ে রেডিয়েটর সহ পিস্টন, লাইনার নষ্ট হবার হার অনেক বেশী। এর মূল কারন গুলোর মধ্যে গুরুত্ব পূর্ন কারণ হলোআমাদের কৃষক ভাইয়েরানতুন অবস্থা থেকেইইঞ্জিন রেডিয়েটর ক্যাপ ব্যবহার করে না এবং মাঠে কাজ করা অবস্থায় রেডিয়েটরের পানি কমে গেলে ইঞ্জিন চালু অবস্থায় মাঠেরকাদা মিশ্রিত ময়লা যুক্ত পানি রেডিয়েটরে দেওয়া। ইঞ্জিনের এই গরম ও চালু অবস্থায় রেডিয়েটরে পানি পূরণের জন্য ঘন ঘন ঠান্ডা পানি দেওয়া হলে পিস্টন বা লাইনার ফেটে যায় এবং অল্প সময়ে রেডিয়েটর নষ্ট হয়ে যায়। রেডিয়েটর ক্যাপ খুলে রাখার আসল কারণ অধিকাংশ কৃষক না জানলেও ক্যাপ ব্যবহার করলে ইঞ্জিন প্রচন্ড গরম হয়ে যাওয়াকে কেউ কেউ কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন যা আদ্যও সত্য নয়। কিন্তু ইঞ্জিনে রেডিয়েটর ক্যাপ ব্যবহার না করলে যে সমস্যা হয় তা হলো-ইঞ্জিন চলার সময় পানি গরম হয়ে বাস্প হয়ে উড়ে যায় ফলে ইঞ্জিন ঠান্ডা করার জন্য রেডিয়েটরের প্রয়োজনীয় পানি দ্রুত শেষ হয়ে যায় যা সঠিক সময়ে পূরণ না হবার জন্য ইঞ্জিনের আয়ু কমে যায়। অন্যদিকেরেডিয়েটরে ক্যাপ ব্যবহার করলে পানি বাস্প হয়ে উড়ে যায় না ফলে একবার রেডিয়েটরে পানি দিলে অনেকক্ষন ইঞ্জিন চালানো যায়। তারপরও মাঠে কাজ করা অবস্থায় রেডিয়েটরের পানি কমে বা শেষ হয়ে গেলে দ্রুত ইঞ্জিন বন্ধ করে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করে রেডিয়েটরে পানি দিতে হবে। উল্লেখ্য, রেডিয়েটর ক্যাপ খুলতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।ইঞ্জিন চালু অবস্থায় কখনও ক্যাপ খুলা যাবে না। ইঞ্জিন বন্ধ করেহালকা চাপে ধীরে ধীরে খুলতেহবে অন্যথায় রেডিয়েটরের গরম পানি বা বাস্পে মুখ, হাত বা শরীরের অন্য অংশ পুড়ে যেতে পারে।

এছাড়াও আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ইঞ্জিন পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেআরও যে ভুল গুলো করেন তা হলো সময়মত এয়ার ক্লিনার পরিস্কার না করা এবং ওয়েলবাথের অয়েল পরিবর্তন না করা। নির্দিষ্ট কার্যঘণ্টা ইঞ্জিন চালনা করার পরও এয়ার ফিল্টার, ফুয়েল ফিল্টার ও অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন না করা বা কিছু টাকা চাতেবা গিয়ে কম দামের ফিল্টার ব্যবহার করা যা ইঞ্জিনের প্রচন্ড ক্ষতি করে। দীর্ঘ ব্যবহারে কালো হয়ে যাওয়ার পরও লুব্রিকেটিং অয়েল পরিবর্তন না করা বা লুব্রিকেটিং অয়েল কমে গেলে কম দামের খোলা লুব্রিকেটিংঅয়েল এমনকি ব্যবহৃত লুব্রিকেটিংঅয়েল পূর্বেরঅয়েলের সাথে ব্যবহার করা এবং অনেক সময় দেখা যায় ১০-১২ বছরেও গিয়ার অয়েল পরিবর্তন না করা। কৃষি কাজের ভরা মৌসুমেঘন ঘন ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য উপরোক্ত কারণ গুলোই যথেষ্ট। উপরোক্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষক ভাইদের রক্ষণাবেক্ষণের সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে।

এয়ার ক্লিনার বা ফিল্টার কে ইঞ্জিনের নাক বলা হয় যা ইঞ্জিন কে সুস্থ রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে ইঞ্জিনের জ্বালানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় যাবাতাস থেকে ইঞ্জিন গ্রহণ করে। কিন্তু বাতাসে অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রচুর ধুলাবালিও থাকে। এই ধুলাবালি সরাসরি ইঞ্জিনে গেলে ইঞ্জিন জ্যাম হয়ে যাবে। তাই ইঞ্জিনে বাতাস ঢোকার পথে এয়ার ফিল্টার বসানো থাকে যেন ফিল্টার বাতাসকে ছেঁকে ময়লাগুলো আটকে দেয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইঞ্জিন গুলোতে সাধারণ অয়েলবাথ শ্রেণীর এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। কৃষক ভাইদের ইঞ্জিনের এয়ার ফিল্টার খুললেদেখা যায় অয়েলবাথের অয়েল ময়লা, কাদা, আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে-তারপরও পরিবর্তন করে না। এয়ার ক্লিনারের ছাকনি সপ্তাহে

বা ৬০ ঘণ্টা পর পর অবশ্যই পেট্রোল দিয়ে পরিস্কার করতে হবে এবং অয়েলবাথ এর অয়েল এর রং যদি কালচে হয় তবে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। মাঠে কাজ করার সময় প্রায় দেখা যায় কৃষক ভাইয়েরা এয়ার ক্লিনারেরভিতর যেন কাদা না যায় তার জন্য বাতাস প্রবেশের পথ সহ এয়ার ক্লিনার গামছা বা কাপড় দিয়ে বেধে রাখে। এতে ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের ভিতর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন যেতে বাধা প্রাপ্ত হয় এবং সিলিন্ডারের ভিতর অক্সিজেনের অভাবে অসম্পূর্ন দহনে প্রচুর পরিমাণেকার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয় যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অন্যদিকেইঞ্জিন কম শক্তি উৎপাদন করে ফলে জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়। সুতরাং কাপড় বা গামছা দিয়ে এয়ার ক্লিয়ার বাধা যাবে না। লুব্রিকেটিং অয়েলকে ইঞ্জিনের রক্ত বলা হয়। ইঞ্জিন চালু করার সাথে সাথেই লুব্রিকেটিং পাম্প ঠিক মত কাজ করছে কিনা তা লুব অয়েল ইন্ডিকেটরের মাধ্যমে খেয়াল করতে হবে। ইঞ্জিন চালু করারপর লুবঅয়েল পাম্প ঠিক মত কাজ না করলে তাৎক্ষনিক ইঞ্জিন বন্ধ করতে হবে নাহলে ইঞ্জিন সিজড হয়ে বড় ধরনের দূঘর্টা ঘটতে পারে। লুব্রিকেটিং অয়েলের ঠরংপড়ংরঃু বা আঠালো ভাব কমে গেলেই পরিবর্তন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই খোলা, নিম্নমানের লুব্রিকেটিং অয়েল ব্যবহার করা যাবে না এবং পূর্বেরলুব্রিকেটিং অয়েলের মধ্যে নতুনলুব্রিকেটিং অয়েল দেওয়া যাবে না।

কৃষি কাজে ব্যবহৃতঅধিকাংশ ইঞ্জিনের আয়ুস্কাল ৮ হতে ১০ বছর হলেও নিয়মানুযায়ী সঠিকভাবে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আমাদের দেশে কৃষি যন্ত্রপাতিঘন ঘন নষ্ট হয়ে আয়ুস্কালের অনেক আগেইব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এতে মেরামত ব্যয় বেড়ে যায় এবং কৃষককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষক ভাইদেররক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম মেনে সতর্কতার সাথে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতেহবে এবং ৪টি কাজ কে না বলতে হবে যেমন- রেডিয়েটরের ক্যাপ খুলে ইঞ্জিন চালানো যাবে না, ইঞ্জিন চালু অবস্থায় টিউবওয়েলের আইরনযুক্তপানি বা মাঠের কাদামিশ্রিত পানি রেডিয়েটরে দেওয়া যাবে না, নতুন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রথম ৩০ ঘণ্টা নিয়ম অনুসারে ইঞ্জিন চালানোর পর ইঞ্জিনে থাকা লুব্রিকেটিং অয়েল আর ব্যবহার করা যাবে না এবং খোলা লুব্রিকেটিং অয়েল ওনিম্নমানের ফিল্টার ব্যবহার করা যাবে না। সেই সাথে ৬০ ঘণ্টা পর এয়ার ক্লিনারের ফিল্টারের ময়লা পরিস্কার করে অয়েল বাথের অয়েল পরিবর্তন করে দিতে হবে। এইভাবে নিয়মানুসারে কৃষি যন্ত্রের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া নিশ্চিত হবে। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমে লাভবান হবে কৃষক, কৃষিতথা দেশ।

লেখক: কৃষি প্রকৌশলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার; সাবেক চেয়ারম্যান (কৃষি অনুষদ) ও প্রক্টর, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।

This post has already been read 8068 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …