শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪

খাবারের থালায় রংধনুর বৈচিত্র্যে বাড়বে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্যগ্রহণের সময়ে খাবারের থালায় বিভিন্ন ধরন ও রং-এর সুষম অবস্থানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যা করোনা অতিমারী সংক্রমণ কমাতে ভূমিকা রাখবে। সোমবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর সেচভবনে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) আয়োজিত করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে খাদ্যাভাসের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এই কথা বলেন।

বারটান পরিচালক কাজী আবুল কালাম (যুগ্মসচিব)-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান (অতিরিক্ত সচিব)। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন-GAIN)-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রুবাবা হক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় পুষ্টি সেবা-(ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস) এর লাইন ডিরেক্টর ডা. এসএম মোস্তাফিজুর রহমান।

বারটান-এর নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান খান (অতিরিক্ত সচিব) সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা খাদ্য নির্বাচনের সময়ে জিহ্বার স্বাদ তথা রসনাবিলাসে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য নির্বাচন এবং সুষম পরিমাণ গ্রহণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বারটান এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

মূল উপস্থাপনায় ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীজুড়ে অতিমারী পরিস্থিতিতে এখন দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে টনক নড়েছে সবার। কিন্তু রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সবসময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মৌলিক চিকিৎসা পদ্ধতির অনুপস্থিতি এবং টিকা যেহেতু এখনও প্রস্তুত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হিসেবে জনপরিসর ও একাডেমিয়ায় জায়গা করে নিয়েছে ।

করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে যে, ৬৫ শতাংশ সংক্রমিত ব্যাক্তির মধ্যে কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে না। ৫ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, আর বাকি সংক্রমিত ব্যক্তিরা ঘরে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করছে করোনা সংক্রমণ কতটা তার উপর প্রভাব ফেলবে।

তিনি যোগ করেন, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টির ভূমিকার শুরু একদম ভ্রুণাবস্থায়। মা ও বাবার বংশগতি এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভাসের উপর ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ভিত্তি গড়ে ওঠে।

দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুষম খাদ্যাভাসের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশীয় খাদ্যাভাসটি সম্পূর্ণভাবে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা ভিত্তিক। এমনিতেই আমরা অনেক বেশি ভাত খেয়ে থাকি আবার দেখা যায় যে সঙ্গে আলু ভর্তাও খেয়ে থাকি। অথচ কখনোই মোট গ্রহণকৃত খাদ্যের ৬০ ভাগের বেশি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত নয়।

খাবারের থালাকে রংধনুর মত সাত রং-এর বৈচিত্র্যে রাঙানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাদা রংয়ের ভাত এর সঙ্গে -বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজে ভরপুর শাকসবজি, মাছ-মাংস, বিভিন্ন ধরনের ডাল সংযোজন করতে হবে। বীজ জাতীয় ফসল যেমন বাদাম জাতীয় খাবার প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে যা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়োডিন সহ বিভিন্ন অণুপুষ্টি যেন খাদ্যতালিকায় থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ায় যেন পুষ্টিগুণ নষ্ট না হয় সেদিকে নজর দিতে বলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন,  ‘প্রচুর পুষ্টি উপাদান ভুল রান্না প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। সঠিক রান্না প্রক্রিয়া  বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দৈনিক ২৫০ মিলি গ্লাসে সাত আট গ্লাস পানি বা আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। প্রাত্যহিক যেন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও মনোযোগ দিতে জোর দেন। তিনি আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সেমিনারের আলোচক গেইন-GAIN-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রুবাবা হক বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যাভাস নিশ্চিতকরণে সামাজিক আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ কর্মসূচীর উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।  মানুষ তখনই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হবে যখন খাবার পুষ্টিমান সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সুস্বাদুও হবে। এছাড়া সরকারের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে জাতীয় পুষ্টি কর্মকৌশলগুলো পর্যালোচনাপূর্বক এর বিভিন্ন  মিসিং লিংকগুলো ঠিক করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে বারটান পরিচালক কাজী আবুল কালাম বলেন,  দেশের অর্থনীতির তিন মৌলিক ভিত্তি কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক ও বিদেশগামী শ্রমিকদের ফলিত পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বারটান। বারটান-এর পুষ্টি সংবেদনশীল কার্যক্রম শক্তিশালী করণে এই প্রশিক্ষণের আওতা আরও বিস্তৃত করতে হবে।

সেমিনারে খাদ্য ও পুষ্টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি দপ্তর সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 4064 times!

Check Also

পাবনায় বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৪ পালিত

পাবনা সংবাদদাতা: “উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য খাদ্যের অধিকার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় …