কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। তিনি প্রতিটি বাড়ির আনাচে কানাচে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি দিয়ে ভরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘যদিও আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে, তথাপি সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং কৃষক ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১০ বছরে কৃষি খাতে ৩.৭ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।’ আর করোনা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে বিশ্ব এখন মন্দার যুগে প্রবেশ করেছে তাই আমাদের পরিকল্পিত কৃষির ওপর বেশি নজর দিতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবজাতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে। তাই সারা বিশ্বের মতো অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার প্রবল ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশেরও। যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির মুল স্তম্ভ তিনটি ধরা যায় যা কৃষি, পোষাক রপ্তানি এবং প্রবাসি শ্রমিক খাত। আইএমএফ এরই মধ্যে জানিয়েছে দেশের অর্থনীতির বড় দুই খাত পোশাক রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ক্ষতিটা হচ্ছে বেশি। তাই কৃষিই এখন প্রধান হাতিয়ার এদেশকে সামনে নিয়ে যেতে।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের বসতবাড়িতে শাকসব্জি, ঔষধি ও ফলমূল তৈরিতে নজর দিতে হবে। কারন খাদ্য বিজ্ঞানীরা একজন প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম ফল-সবজি খাবার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে শাকপাতা ১১০ গ্রাম, ফুল-ফল-ডাঁটা জাতীয় সবজি ৮৫ গ্রাম, মূল জাতীয় ৮৫ গ্রাম ও ফল ১১০ গ্রাম ধরা হয়েছে। দেশে ১ কোটি ৯৪ লাখ বসতবাড়ির আওতাধীন প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর জমি রয়েছে। এখনও মোট উৎপাদিত ফলের প্রায় ৫৩ শতাংশ ফল বাণিজ্যিক বাগান থেকে উৎপাদিত হয়, বাকি ৪৭ শতাংশ ফলের জোগান আসে বসতবাড়ি ও তৎসংলগ্ন জমি থেকে। কাজেই ফলসমৃদ্ধ দেশ গড়তে দুই জায়গাতেই ফল চাষে জোর দিতে হবে। বিগত ৫ বছরে আমের বাণিজ্যিক বাগান ও উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। নিরাপদ ফল উৎপাদনে এখনও বসতবাড়িতে ফল চাষ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বসত বাড়িতে চাষাবাদের সুবিধা হচ্ছে-বসতবাড়িতে পরিকল্পিত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলদ, মসলা, সবজি ও ঔষধি বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পারিবারিক খাদ্য, পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করা যাতে পরিবারের সব সদস্যের শ্রম বিমেষ করে মহিলাদের শ্রম উৎপাদন কাজে লগিয়ে স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা। এছাড়া সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা যায়। অল্প পরিমাণ জমিতে অনেক ধরনের সবজি ও ফল আবাদ করা যায়। সবজি আবাদে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে। একই জমিতে বছরে কয়েকবার সবজি চাষ করা সম্ভব। পুষ্টির দিক থেকে প্রায় সব শাকসবজি উন্নত মান সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে বছরব্যাপী উপযুক্ত পরিমাণ সবজি খেয়ে পুষ্টিহীনতা দূর করা এবং রোগমুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসতবাড়িতে কৃষির জন্য অবস্থা, পরিসর, সম্পদ, পুঁজি, ক্ষমতা, সুযোগ ইত্যাদিও ওপর ভিত্তি করে ৪টি গ্রুপের কৃষকদের জন্য ভাগ করে বাস্তবায়ন করলে সুফল বেশি পাওয়া যাবে। প্রথমটি ভূমিহীন এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্যে, দ্বিতীয়টি ক্ষুদ্র বা ছোট কৃষকদের জন্যে, তৃতীয়টি মাঝারি কৃষকদের জন্যে এবং চতুর্থটি বড় কৃষকদের জন্যে। এভাবে ক্যাটাগারি করে পরিকল্পনা মডেল তৈরি করলে সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করলে সুবিধা এবং সফলতা বেশি আসবে।
বসতবাড়ির কোথায় কোন ফসল চাষ করবেন?
আমাদের বাড়ি বা বাড়ির আশপাশে অনেক জায়গা রয়েছে। এসব জায়গায় সারা বছরই সবজি চাষ করা যায়। তবে জানতে হবে কোথায় কি ধরনের চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই সেই সম্পর্কে।
বাড়ীর উত্তর-পশ্চিম পাশেঃর্¦ আম, কাঠাল, কামরাংগা, অমড়া, বেল, আমলকি, নারকেল, সুপারি সহ বড় গাছ
উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পশ্চিমেঃ কলা, পেপে, আনারস, লেবু, পেয়ারা, কুল এসব
বাড়ির সীমানায়ঃ কাঁচকলা, পেয়ারা, কুল, সজিনা, পেঁপে ইত্যাদি চাষ করুন।
খোলা জায়গা: খোলা জায়গায় সব ধরনের সবজি চাষ করা যায়। তার মধ্যে বাঁধাকপি, লালশাক, গিমা
কলমি, পুঁইশাক, পালংশাক, বাটিশাক ও ডাঁটাশাক।
স্থায়ী মাচায় এক বর্ষজীবিঃ কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ধুন্দল, ঝিঙা, শসা লাউ,
চিচিংগা, করলা ও লতা জাতীয় শাক-সবজি। মাচার নীচে বা আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গা আদা, হলুদ, কচু,
মানকচু, ওলকচ, আর স্যাতস্যাতে জায়গায় পানি কচু
ডালের বাউনি বা সাধারণ গাছেঃ লতাজাতীয় সবজি হিসেবে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, ধুন্দল,
সীম, গোল মরিচ, পান, গাছআলু, চিচিংগা এবং অন্যান্য ফসল হিসেবে পান চাষ করা যায়।
সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যঃ তেজপাতা, দারুচিনি, সফেদা, ফলসা, ডালিম গোলাপজাম, এসব লাগানো যেতে পারে। ছায়াদানের জন্য বড় গাছ যেমন- শরীফা,আতা,সুপারি,তেজপাতা,দারুচিনি খাটো জাতের কলম।
ঘরের চালে ও ছাদে: লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক জাতীয় লতা সবজি। আর পাকা ঘরের ছাদে টবে পেয়ারা, কুল, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁপে, লেবু, ডালিম ইত্যাদি।
জ্বালানীর জন্য : বাড়ির বেড়ায় খেজুর, বকফুল, সজিনা, মান্দার, জিকা, বাবলা, ইপিল ইপিল, ইউক্যালিপ্টাস
পুকুরের পাড়ের জন্য করনীয়ঃ হেজে মজে যাওয়া পুকুর ডোবা সংস্কার করে মাছ চাষের উপযোগী করতে হবে। এর পাশে হাঁস-মুরগি পালন করতে হবে। পুকুর পাড়ে নিম গাছ লাগাতে হবে যাতে পানি শোধন হয়। এর সাথে নারিকেল সুপারির গাছ থাকবে। পুকুরের মধ্যে পানিফল লাগানো যেতে পারে। এতে মাছ ছায়া পাবে। এছাড়া মৌমাছী, কোয়েল, কবুতর এর পাশে চাষ করা যেতে পারে। পুকুর পাড়ে পেয়ারা, কলা, লেবু, ডালিম, লাউ, করলা, ঝিংগা, সাথে মিষ্টি কুমড়া বা অন্যান্য লতাজাতীয় সবজি, নেপিয়ার ঘাস ইত্যাদি চাষ করা যায়।
বসতবাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ফল গাছ লাগাতে হবে, বিশেষ করে পুষ্টিকর পেঁপে গাছ। কথায় আছে- বেশি করে পেঁপে খান, বাড়ি থেকে ডাক্তার তাড়ান”।
বসতবাড়ির আঙ্গিনায় জৈব পদ্ধতিতে সারা বছর শাকসবজি চাষ করা যায়। কিছু মডেল অনুসরণ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। যেমন কালিকাপুর সবজি উৎপাদন । এই মডেলের সবজি বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদের মাধ্যমে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের সারাবছরের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য বসতবাড়ির রোদযুক্ত উঁচু স্থানে ৬ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার চওড়া জমি নির্বাচন করে পাঁচটি বেড তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ৮০ সে.মিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা থাকবে ২৫ সে. মিটার।
সবজি বিন্যাস
১) প্রথম খন্ডের বিন্যাস : মুলা/ টমেটো-লালশাক-পুঁইশাক
২) দ্বিতীয় খন্ডের বিন্যাস : লালশাক + বেগুন-লালশাক-ঢেঁড়শ
৩) তৃতীয় খন্ডের বিন্যাস : পালংশাক-রসুন/ লালশাক-ডাঁটা-লালশাক
৪) চতুর্থ খন্ডের বিন্যাস : বাটিশাক-পেঁয়াজ/ গাজর-কলমীশাক-লালশাক
৫) পঞ্চম খন্ডের বিন্যাস : বাঁধাকপি-লালশাক-করলা-লালশাক
তবে বসতবাড়িতে চাষাবাদ করতে রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য কিছু বালাইনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যেমনঃ
বোর্দো মিক্সারঃ এটি এমন একটি মিশ্রণ যা গাছের রোগ দমনে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
বোর্দো মিক্সার তৈরির উপকরণ হচ্ছে তুঁতে, চুন, পানি, ২টি ছোট ও ১টি বড় মাটির পাত্র, দুটি বাঁশের/কাঠের কাঠি, একটি ইস্পাতের চাকু।
প্রস্তুত প্রণালী
১। তুঁতে ও চুন আলাদাভাবে মিহি করে গুড়া করে নিতে হবে।
২। ২টি ছোট মাটির পাত্রে ৫ লিটার করে মোট ১০ লিটার পানি নিতে হবে।
৩। একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম মিহি করা তুঁতে ও অন্য পাত্রে ১০০ গ্রাম মিহি করা চুন ঢেলে দিতে হবে।
৪। বাঁশের কাঠি দিয়ে দুই পাত্রের তুঁতে ও চুন ভালভাবে ঘেটে নিতে হবে। এরপর ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখ হবে।
৫। এরপর দু পাত্রের মিশ্রিত দ্রবণ বড় মাটির পাত্রে ঢেলে ভালভাবে ঘেটে নিতে হবে। এটাই হল বোর্দো মিক্সার।এখানে চুন, তুঁতে ও পানির অনুপাত হবে ১: ১: ১০০।
৬। মিক্সারটি সঠিক মাত্রায় হয়েছে কিনা তা রং দেখে বোঝা যায়। দ্রবণের রং গাঢ় নীল হলে বুঝতে হবে সঠিক হয়েছে। দ্রবণ সবুজ বা সাদা হলে যথাক্রমে তুঁতে ও চুন বেশি হয়েছে। পানি দিয়ে মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে।
৭। প্রস্তুতকরা মিক্সার ইস্পাতের চাকুর অগ্রভাগ ডুবিয়ে দেখে নিন লালচে দাগ পড়ে কিনা। যদি চাকুতে লাল দাগ না পড়ে তবে বুঝতে হবে মিশ্রণ মাত্রা সঠিক হয়েছে।
বিষ কাটালী দ্বারা জৈব কিটনাশক তৈরি
বিষ কাটালীর পাতা এবং কান্ডের নির্যাস দিয়ে অনেক কীট পতঙ্গ দমন করা যায়।
যেমন- বিভিন্ন ধরনের মাছি, জাব পোকা এবং পোকার কীড়া।
দ্রবন তৈরি পদ্ধতি
১) পাতা এবং কান্ড সংগ্রহ করে তা যন্ত্র বা সিল পাটায় পিষে নিতে হবে।
২) তারপর ১ কেজি পেষা পাতা ৮-১০ কেজি পানির সাথে মিশিয়ে ফসলে প্রয়োগ করতে হবে।
মরিচ দ্বারা জৈব কিটনাশক তৈরি
মরিচের গুঁড়া দিয়েও কীটপাতংগ দমন করা যায়। এটা পোকা মাকড়ের পাকস্থলীতে বিষ ক্রিয়া ঘটায়। এটা পিঁপড়া, জাবপোকা, কীড়া, ক্যাবেজ ওয়ার্ম দমন করে থাকে।
দ্রবন তৈরি পদ্ধতি
১. ১০০ গ্রাম মরিচের গুঁড়া ১ লিটার পানির মধ্যে গুলিয়ে এক রাত রেখে দিতে হবে।
২. ভাল কাপড় দিয়ে ছেঁকে ঐ দ্রবন আরও ৫ লিটার সাবানের ফেনাযুক্ত পানিতে মিশিয়ে ফসলের উপর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
নিম দ্বারা জৈব কিটনাশক তৈরি
নিমের বীজ থেকে তৈরি ঔষধ অনেক ধরনের মাছি, বিটল জাতীয় পোকা, কীড়া এবং বিছা দমন করে। এটা সব সময়ই পোকাকে মেরে ফেলে না কিন্তু প্রায়ই পোকার খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
দ্রবন তৈরি পদ্ধতি
১) নিম ফল যখন হালকা সবুজ থেকে হালকা হলুদ রং ধারন করে তখন এটা সংগ্রহ করতে হবে।
২) বীজ ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
৩) হাতল যন্ত্র অথবা পাথর দিয়ে ফলগুলো গুঁড়া করতে হবে। এরপরে পানিতে গুঁড়াগুলো মিশিয়ে সারা রাত্রি ঢেকে রাখতে হবে। ১ শতাংশ জমির (অথবা ৪ঢ১০আয়তনের ৮টি ভিটা) জন্য ১০ সের স্প্রে করা দরকার। প্রতিসের দ্রবন তৈরির জন্য দুই মুঠো (৫ তোলা)বীজের দরকার হবে।
৪) পরের দিন একটা ভাল চিকন কাপড় দিয়ে ছেঁকে তারপর এক গুচ্ছ খেজুরের পাতা, ঝাড়– /স্প্রে মেশিন অথবা পানির ঝর্ণা দ্বারা গাছের উপর ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
নিমের পাতার নির্যাসও কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়। ১ ভাগ পাতা এবং ৬ ভাগ পানি একটি পাত্রে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট ফুটাতে হবে। এরপর ঠান্ডা করে ঐ পানি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও সবজি বীজ সংরক্ষণের সময় শুকনো নিম পাতার গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে যা গুদামদাজাত পোকার আক্রমণের হাত থেকে বীজকে রক্ষা করে।
তবে সব্জি ও ফল সমৃদ্ধ দেশ গড়তে করণীয়
১. সব্জি ও ফল রপ্তানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদেও দেশে প্রায় ২৫%-৪০% পর্যন্ত নানা রকম ফল ও সব্জি নষ্ট হয় তা কমাতে হবে।
২. প্রতিটি জেলায় মানসম্মত হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন করে এর মাধ্যমে সে এলাকার উপযোগী সব্জি ও ফলের চারা কলম চাষিদের মাঝে সুলভ মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. বেসরকারি নার্সারিগুলো ফলের মানসম্মত চারা উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সব্জি ও ফলের ক্রপ জোনিং করতে হবে।
৫. সব্জি ও ফল রপ্তানির জন্য উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
৬. সব্জি ও ফলের সংগ্রহোত্তর অপচয় কমানোর জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে
৭. সব্জি ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে আরও উৎসাহিতকরণ করতে হবে
৮. সব্জি ও ফল সংরক্ষণের জন্য এলাকাভিত্তিক হিমাগার স্থাপনসহ পরিবহনের জন্য কুলিং ভ্যান ও প্যাকেজিং ব্যবস্থা উন্নতকরণ করতে হবে
৯. প্রতি গ্রামে বা ওয়ার্ডে যদি একটি করে সমবায় গড়ে তোলা যায় তাহলে, ঐ পণ্যগুলো সমবাযের নিকট বিক্রি করবে এবং বাজারজাত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে, দুর্ভিক্ষে, সংকটে সরকার প্রধানের আস্থার জায়গা কৃষি। ইতিমধ্যে এদেশের মানুষ পৃথিবীর বুকে নানা ইশর্^ানীয় পরিসংক্যান স্থাপন করতে সামর্থ্য হয়েছে যেমন: ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনে বিশ্বের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ, বিশ্ব পাট উদ্ভাবনে দ্বিতীয়, আলুতে বিশ্বে অষ্টম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে চতুর্থ তবে তৃতীয় হওয়ার দ্বার প্রান্তে, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। এসব কিছুই সম্ভব বর্তমান কৃিষবন্ধব সরকারের দূরদর্শিতা, সময়মতো বিনিয়োগ এবং কৃষক এবং কৃষি বিভাগের আন্তরিকতার কারণে। এখন কৃষকদের মাঝে সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সরাসরি কৃষি পরামর্শ সেবা ও লিফলেট বিতরণ করতে হবে এবং কৃষি কলসেন্টার, ফেসবুক, ইউটিউব, মোবাইল অ্যাপস এর মতো ই-কৃষি বা ডিজিটাল কৃষি সেবার মান ও সক্ষমতা আরোও বৃদ্ধি করে কৃষকদের সেবা প্রদান। এভাবে বসতবাড়িতে চাষ করে দেশের মোট ফলন বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকার তরুন জনগোষ্ঠির আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান, বৈদেশিক অর্থ উপার্জন ও ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (Sustainable Development Goal) অর্জনে লক্ষনীয় ভূমিকা রাখা সম্ভব। অধিক উৎপাদিত দেশী ফল ও সব্জি পুষ্টিহীনতা দূরীকরণের পাশাপাশি দানাদার খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস সংকোচিত করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সোনার বাংলাকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।
লেখক : আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী অঞ্চল, রাজশাহী।