কৃষিবিদ ড. এমএ মজিদ মন্ডল : বিশ্বে বাণিজ্যিক ফলসমুহের মধ্যে আনারস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। বাংলাদেশে সৌন্দর্যের জন্য এ ফলকে স্বর্ণকুমারী বলে অ্যাখায়িত করা হয়। আকর্ষণীয় সুগন্দ্বে ও অম্লমধুর স্বাদের জন্য এ ফল সকলের নিকট সমাদৃত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫-২০ হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয় এবং প্রায় ১৫০-২০০ হাজার মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়। প্রতি বছর আনারস চাষী ও ব্যবসায়িরা ব্যাপক পরিমান ক্ষতির শিকার হয়: ১. সঠিক পরিচর্যার অভাব ও রোগ-পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে, এবং ২. ফল পাকার সময় সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সমস্যার কারণে। তাই আমাদের কৃষক ভাই এবং কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্রদের জন্য উক্ত সমস্যা সমাধান আলোচনা করা হলো-
রোগ দমন
ফল পচা
আনারসের জন্য এ রোগ খুবই মারাত্তক। সেরাটোসাইটিস প্যারাডোসা (Ceratocystis paradoxa) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের কারণে উৎপাদন শুণ্যের কাছাকাছি চলে আসতে পারে।
রোগের লক্ষণসমুহ
- ফলের উপর পানি ভেজা দাগ পড়ে পরে উহা হলুদ হয়ে গাঢ় বাদামী ও কালর্চে রং ধারন করে।
- আক্রান্ত অংশের টিসু (কোষসমুহ) নরম হয়ে পচে যায়।
- পাকা ফল আক্রান্ত হলে একটি বৈশিষ্টপূর্ণ গন্ধ পাওয়া যায়।
- পাতা আক্রান্ত হলে সম্পূনর্ণ গাছ কাল হয়ে পছে যায়।
দমন ব্যবস্থা : (১) বাগান পরিস্কার রাখতে হবে। (২) রোপন দ্রব্য রোগ প্রতিরোধী জাতের সাকার ব্যবহার করতে হবে। (৩) রোপনের পূবে সাকার দুই ঘন্টা হালকা রোদে শুকে নিলে এ রোগের সম্ভবনা কম থাকে। (৪) সংগ্রহকৃত আনারস প্যাকিং এর পূর্বে শুধু মাত্র ঝুড়িকে ৩ % ফরমালিন দ্বারা রোগ মুক্ত করতে হবে। (৫) ফলের কর্তিত গোড়ায় ১০ % বেনজোইক এসিড দ্রবনে ডুবিয়ে নিতে হবে।
কান্ড পচা
এ রোগ ফাইটোপথোরা প্যারাসাইটিকা (Phytophthora parasitia) নামক এক প্রকার ছএাক দ্বারা হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণসমূহ
- প্রথমে পাতা হলুদ ও পরে বাদামী হয়ে যায়।
- কান্ডরে গোড়ার অংশ ও মুল কাল বর্ণ ধারণ করে পচতে করে।
- এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মরে যায়।
দমন ব্যবস্থা : (১) বাগান পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে । (২) রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে। (৩) বাগানে যেন পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) রোগ প্রতিরোধের জন্য রোপনের পূবে ৪ঃ ৪ ঃ ৫০ অনুপাতে বোর্দোমিকচার দ্রবনে চারা ডুবিয়ে নিতে হবে।
পোকামাকড় দমন
ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ : (ক) এ পোকা গাছের পাতা, কান্ড, ফল প্রভৃতি থেকে রস চুষে খেয়ে সেখানে ক্ষত সৃষ্টি করে। (খ) মুল বা কান্ড ও মুলের সংযোগস্থলে আক্রমণ হলে গাছ নেতিয়ে পড়ে। (গ) ফল আক্রান্ত হলে পচে যায়। (ঘ) আক্রান্ত স্থান দিয়ে ভাইরাস প্রবেশ করে অ্যানাসা উইল্ট রোগ সৃষ্টি করে।
দমন ব্যবস্থা : (১) রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে ( যেমন- কুইন, পানামবুকো, স্প্যানীশ প্রভৃতি)। (২) ফল সংগহ্র কারার পর শুকনো লতাপাত পুড়িয়ে ফেলতে হবে। (৩) ম্যাথিয়ন-৫৭ ইসি ৮ সিসি ২.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলকি প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।