নিজস্ব প্রতিবেদক: হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। এজন্য একটি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে হাঙ্গেরি এগ্রো ফুড প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রিসহ বাংলাদেশের বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা ও ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক ইন্ডাষ্ট্রিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা আকর্ষনীয়, হাঙ্গেরি এসকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে চায়।
বাংলাদেশে সফররত হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পিটার সিজিজারটো -এর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শির সাথে সচিবালয়ে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজমসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। করোনা মোকাবেলা এবং করোনাকালে রপ্তানি বাণিজ্য এবং অর্থনৈকিত কর্মকান্ড সচল রাখার প্রশংসা করে মি. পিটার সিজিজারটো বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় হাঙ্গেরি অংশিদার হতে চায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, হাঙ্গেরির সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে জাপান, ভারত, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। পরিবর্তনশীল বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতিতে আমেরিকা, জাপানসহ অনেক দেশ তাদের শিল্প-কলকারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করছে। দেশগুলো বাংলাদেশকে এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান মনে করছে। বাংলাদেশ ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেষ্টমেন্ট(এফডিআই) এ ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ পণ্যের একটি বড় বাজার। এখানে হাঙ্গেরি বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে।
তিনি বলেন, উভয় দেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠনের মাধমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্যিত করা সহজ হবে। এগ্রো ফুড প্রসেসিং, বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে হাঙ্গেরির বিনিয়োগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। এছাড়া, আইসিটি, সেবাখাতে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষতার সাথে সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরী পোশাক। বাংলাদেশ পৃথিরীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রপ্তানি কারক দেশ। এ সেক্টরে প্রায় ৪৮ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সরকার এ শিল্পকে সচল রাখতে আর্থিক প্রনোদনা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা চালু রেখে রপ্তানি বাণিজ্য সচল রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের চাহিদা মোতাবেক বিশ্বমানের মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন মেডিকেল পণ্য রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ প্রতিরোধকারী ফ্যাব্রিক তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্বমানের মেডিকেল পণ্য উৎপাদন করে প্রায় ১৪২টি দেশে রপ্তানি করছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে হাঙ্গেরিতে রপ্তানি করেছে ১১.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে আমদানি করেছে ১২.১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১৮.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি করেছে ১১.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আগামী একসপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রেরণ করবে।