পোল্ট্রি পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ব্যবহারিক জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মীলন ঘটিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক দু’টি অটোমেটেড পোল্ট্রি হাউস। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পটিকে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণা কাজে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বাকৃবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ যার মধ্য দিয়ে শিল্পের সাথে শিক্ষার সেতুবন্ধ রচিত হয়েছে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা এ ধরনের প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে এলে দক্ষ জনবল তৈরি অনেক বেশি সহজতর হবে; সমৃদ্ধ হবে দেশীয় কৃষি, শিল্প ও অর্থনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে “এন্টারপ্রেনরশীপ ডে” উদযাপন এবং “এন্টারপ্রেনর ক্লাব” চালু করার প্রস্তাব শীঘ্রই সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হবে জানান ড. হাসান।
পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস আলী বলেন, ২০১৭ সালে বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ, প্যারাগন গ্রুপ, বিপিআইসিসি, এজিসিও প্রোটিন এন্ড গ্রেইন এবং পোল্ট্রি কনসালট্যান্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস লি. এর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে চলমান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে দু’টি অটোমেটেড পোল্ট্রি শেডের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অতি প্রয়োজনীয় আরও কিছু ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। একটি ব্রয়লার ও একটি লেয়ার- মোট দু’টি অটোমেটেড শেডে মুরগির বাচ্চা প্রদান, ফিড সরবরাহ, চিকিৎসাসহ আগামী একবছরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে প্যারাগন গ্রুপ।
প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, আমরা চাই শিক্ষার্থীরা তত্ত্বীয় জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারি শিক্ষায় সমৃদ্ধ হয়েই যেন জব মার্কেটে প্রবেশ করেন। দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প এখন আর আগের অবস্থানে নেই। সরকারের সদিচ্ছায় আমরা ইতোমধ্যেই রপ্তানী বাজারে পা রাখতে শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সুদৃঢ় অবস্থান গড়তে হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের কোন বিকল্প নেই। আগামীতে ফিড মিল, ল্যাব ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নেও প্যারাগন গ্রæপ এবং বিপিআইসিসি সাথে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মসিউর।
বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, দক্ষ জনবলের জন্য এক সময় আমাদেরকে বিদেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। শিল্প উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় যে কার্যক্রম শুরু হলো তা থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, বৃহত্তর কৃষির উন্নয়নে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালেই বঙ্গবন্ধু পাট, মাছ ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছিলেন। আজ আমরা বছরে মাথাপিছু ১০৪টি ডিমের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় করোনা মহামারিকে জয় করেই আমরা সবার জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার বলেন- পোল্ট্রি একটি বিজ্ঞান। গবেষণার কারণেই পোল্ট্রি আজকের অবস্থানে এসেছে। তিনি বলেন, ব্রয়লার মুরগিতে ভ্যালু সংযোজন করে রপ্তানীর প্রচেষ্টা চলছে। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যতের উন্নয়নে গবেষণা ও গবেষকদের গুরুত্ব অপরিসীম।
ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান- বর্তমান সময়ে পোল্ট্রি ও প্রাণিজসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে আরও বেশি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ হওয়া প্রয়োজন। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীকে আধুনিকায়নের সুপারিশ জানান শাহজাহান। ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী জাহিন হাসান কিছু শর্ট কোর্স চালু করার প্রস্তাব রাখেন। অন্যদিকে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. রকিবুর রহমান টুটুল- ইন্ডাষ্ট্রি লিডারদের সাথে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মতবিনিময় আয়োজনের প্রস্তাব করেন।
এসিআই এগ্রি বিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাকৃবি’র সিন্ডিকেট সদস্য ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, দক্ষ জনবল তৈরি হলে শুধু শিল্পেরই উন্নতি হবে তা নয় বরং সেই সাথে সাধারন তৃণমূল খামারিদেরও দক্ষতা ও উপার্জন দু’টোই বাড়বে।
ভার্চুয়াল সভায় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. জাসিম উদ্দীন খান, পশুপালন অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. একে ফজলুল হক ভূঁইয়া, প্রফেসর ড. শওকত আলী, প্রফেসর ড. এস.ডি চৌধুরি, ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক ডা. আলী ইমাম, সাবেক সাধারন সম্পাদক মাহাবুব হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, প্রমুখ।