ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : এসআরডিআই এর গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলের অনাবাদি ও পতিত জমিতে কৃষক বর্ষাকালীন আগাম জাতের শিম চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে কীটনাশক, সার, বীজ, মাচা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও নগদ অর্থ সহায়তার ফলে ঘুরতে শুরু করেছে উপকুল অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক ভাগ্যউন্নয়নের চাকা।
চলতি বছর ১০ জন কৃষক ৩৩৩ শতক জমিতে শিমের চাষ করেছেন, তার মধ্যে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাপপুর ইউনিয়নে ৪টি, খর্ণিয়া ইউনিয়নে ৫টি এবং বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় ১টিসহ মোট ১০টি গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়। প্রতি প্রদর্শনী প্লটে ১ জন করে মোট ১০ জন কৃষকই আগাম জাতের শিমের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শচীন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, এ প্রকল্প লবণাক্ত এলাকায় পুকুর ও ঘেরের পাশে পতিত জমিতে অসময়ের সবজি চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এসআরডিআই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, কীটনাশক, সার, বিভিন্ন জাতের বীজ, মাচা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, নগদ অর্থ এবং করোনাকালের সুরক্ষায় মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। শচীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, শিম একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। এটি জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, জমির আইলে, ঘরের চালে, এমনকি গাছেও ফলানো যায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে সেচের তেমন প্রয়োজনও হয় না। ফলে কৃষকরা সহজেই অপসিজন শিম চাষে লাভবান হন।
এসআরডিআই’র তথ্যমতে, উপকূলীয় অঞ্চলে মোট ৩১ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর, যা মোট আবাদযোগ্য জমির ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ।
ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া গ্রামের চাষি রেজাউল মোড়ল বলেন, এসআরডিআই এর অঙ্গ প্রকল্পের সহযোগিতা নিয়ে তিনি রাস্তার পাশের পতিত জমিতে শিম চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। গত বছরও তিনি এভাবে শিম চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন। তাই এ বছরও চাষে উদ্ধুদ্ধ হন। ডুমুরিয়ার শরাপপুর গ্রামের চাষি সিরাজ মোল্লা বলেন, শিম চাষের ক্ষেত্রে তিনি ঘেরের পাড়ের মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গত বছর বেশি ফলন পেতে সক্ষম হন। সব ঠিক থাকলে এবারও লাভবান হবেন বলে আশা করছেন। ডুমুরিয়ার খর্ণিয়ার
আরেক চাষি আব্দুস সালাম খান বলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর সহযোগিতায় মাটি ও পানি পরীক্ষা করে তিনি শিমের চাষ করেছেন। এসআরডিআই এর অঙ্গ প্রকল্পের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সঠিক মাত্রার সার প্রয়োগের মাধ্যমে শিমের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনার অনেক ভালো হয়েছে।
শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ ও আঁশ জাতীয় শিম আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হয়। জীবনকাল ১৯০-২১০ দিন। হেক্টর প্রতিফলন ১০-১২ টন। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল ধরে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফল দেয়। ফলন প্রতি শতকে ৩৫-৭৫ কেজি, হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন। অনাবাদি ও পতিত জমিতে কৃষক বর্ষাকালীন আগাম জাতের শিম চাষে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজাত পন্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশী স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ।
এ কর্মসূচির মূল লক্ষ সম্পর্কে জানা যায় যে, গাপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষিরা ও পিরোজপুর এই ৫টি জেলার শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করন এবং উপযুক্ত শস্যজাত, মানবসম্পদ বীজ, যথাযথ মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, জৈব সারও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনা, কৃষি তাত্ত্বিক পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের গড় ফলন পার্থক্য ৫% হ্রাস করন ও মাঠ পযায়ে কাযকরী সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩৩৯০ মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা ও বসতবাড়ির খালি জমিতে উদ্যান ফসলের আবাদের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর কৃষক পরিবারের পুষ্টিমান উন্নয়ন এবং আয়বর্ধক কাযক্রমে ৩০% থেকে নূন্যতম ৫% মহিলাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাথ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার হচ্ছে এসআরডিআই প্রকল্পের লক্ষ । এ লক্ষ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এসআরডিআই প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
উল্লে্খ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপকুলসহ গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষিরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (এসআরডিআই) ৫টি জেলার কৃষি উন্নয়নের লক্ষে ২০১৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ৬৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্প গ্রহন করে। এ প্রকল্পের আওতায় ৯০০০ বর্গফুট আয়তনের ডিএই’র খুলনা আঞলিক অফিস ভবন নির্মাণ ,প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ১১০২টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, প্রকল্প এলাকায় ৭৮টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ,১৯৫টি কৃষি মেলা,বিভিন্ন কৃষিজ পন্যের ২৭৮৮৫টি প্রদর্শনী,মাঠ দিবস,বৈদেশিক শিক্ষা সফর, ৭৮টি উদ্ধুদ্ধকরণ ভ্রমণ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূছি।