এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক : বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ও প্রখ্যাত ধান বিজ্ঞানী ড. তমাল লতা আদিত্য গতকাল ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রি. রাত আনুমানিক ১১.৪৫ ঘটিকায় গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে ব্রি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়াত আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
ড. তমাল লতা আদিত্য ৩১ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার কুন্ডল বালিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত্যুঞ্জয় আদিত্য এবং মাতার নাম সুনীতি রাণী আদিত্য। তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ২০০২ সালে ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ প্রজনন এবং বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২১ নভেম্বর ১৯৯৪ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ব্রির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ০৯ আগস্ট ২০১০ সালে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে পদন্নোতি লাভ করেন এবং ০২ অক্টোবর ২০১৭ সালে পরিচালক গবেষণা (চলতি দায়িত্ব) পদে যোগদান করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
ধান প্রজননবিদ হিসাবে অনেকগুলো ধানের জাত উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বিশেষ করে ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৮, ব্রি ধান৯০ এবং ব্রি ধান৯৫ ধানের জাতগুলো উদ্ভাবনে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৭১ ধানের জাতসমূহ উদ্ভাবনে তাঁর অবদান ছিল।
ধান গবেষণায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ড. তমাল লতা আদিত্য PBGSB Young Scientist Award 2013-14, Professional Excellence Award 2014, Rotary Club, Dhaka, Best Scientist BRRI Award 2014, STRASA Award 2018 অর্জন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ব্রির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করে। ড. আদিত্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জয়া আলোকিত নারী ২০২০ সম্মাননায় ভূষিত হন।
ড. তমাল লতা আদিত্য ব্রির গবেষণা কর্মসূচী প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৩০টির বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পেশাগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ভারত, নোপাল, ভুটানসহ পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, Plant Breeding & Genetics Society of Bangladesh, Bangladesh Association for Plant Tissue Culture & Biotechnology, Bangladesh Rice Research Institute Scientist Association, Bangladesh Academy of Science অনেক পেশাজীবী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র, চিকিৎসক স্বামীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ধান গবেষণার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে তাঁর অসামান্য অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।