চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার সিংহভাগই চট্টগ্রামের। রবিবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বণিক সমিতি মিলনায়তনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ নিয়ে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বক্তাগণ এ তথ্য জানান। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের লাগামগীন মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
চট্টগ্রামে ক্যান্সারের রোগী সবচেয়ে বেশি হওয়ার মূল কারণ হিসেবে বক্তারা দাবী করেন- চট্টগ্রামের লোকজন খাবারে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে যেগুলি ফুডগ্রেড বলে চালানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এ রঙগুলি কাপড় ও দেয়ালের রঙ। বিভিন্ন খাবার ও বেকারী খাদ্যে ফুড কালারের নামে যে রঙ দেয়া হচ্ছে তার প্রায় সবটুকুই বিষ। অপরিস্কার অপরিছন্ন পরিবেশে খাদ্য রান্না ও পরিবেশেন, মানহীন খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ, মানহীন রান্নার তেল ও ঘি, মাছে জেলি ব্যবহার, ওজনে কম দেয়া, শাক-সবজিতে বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার, দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা, দেশি মুরগির কথা বলে সোনালী মুরগি বিক্রি, অপরিস্কার পরিবেশে মুরগি জবাই ও বিক্রি, ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়ীদের অসৌজন্যমুলক ব্যবহারের কারনে ক্রেতা-ভোক্তাদের অধিকার শুধু ক্ষুন্নই হচ্ছে না, ক্রেতা-ভোক্তা হিসাবে প্রতারণার প্রকোপ মারাত্ম্ক আকারে বেড়েই চলেছে।
বক্তারা আরো বলেন, এ সমস্ত ব্যবসায়ীরা একটি পণ্যের ব্যবসা করলেও ১০টি পণ্য ও সেবা বাইরের থেকে কিনতে হচ্ছে। ফলে পুরো সমাজটিই যেন লুটপাটের হাট। যে যেভাবে পারে লুটপাট করে জনগণের পকেট কাটছে। আইন থাকলেও আইনে প্রয়োগ খুবই সীমিত। ফলে আইন না মানার সংস্কৃতি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার চালের ব্যবসায়ীদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই মিনিকেট বস্তা প্রতি ২৫৭৫ টাকা ও মোটা চাল ২৪০০ টাকা নির্ধারণ করলেও চট্টগ্রামে চালের বাজার ২৪০০ ও ২২০০ টাকা। সরকারের দাম বেঁধে দেয়ায় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হলো এবং ব্যবসায়ীদের দাম বেশি নেয়ার সুযোগ তৈরি হলো। সরকার রাইস মিল মালিকদের সুবিধা প্রদানের জন্য এ ধরণের হটকারী সিদ্ধান্ত পরিহার করে ১৬কোটি ভোক্তার স্বার্থ চিন্তা করে গণমুখী সিদ্ধান্ত গৃহিত না হলে ভোক্তাদের অধিকার সর্বদাই ক্ষুন্ন হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় পাহাড়তলী বণিক সমিতির আওতাধীণ পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির বাজারের প্রতিটি দোকান মূল্য তালিকা প্রদর্শন করবেন। মাছ ও মাংশে কোন রঙ মিশ্রণ করা ও জেলী ব্যবহার করবে না। মুরগীর দোকানে পরিস্কার পরিছন্ন রাখবে ও দেশী বলে সোনালী বিক্রি করবে না। মুরগীর দোকানে মুরগি জবাইয়ে রক্ত নিস্কাষনের জন্য চোঙ্গা ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ রাখবে, বিক্রেতা ও জবাইকারক গ্লাবস ও এপ্রোন ব্যবহার করবে। ওজনে ডিজিটাল স্কেলে কোন কারচুপি করবে না। বাজার ও আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে। ক্রেতাদের সাথে দোকানে কর্মচারী ও মালিক কোন প্রকার খারাপ আচরণ করবে না। কোন সমস্যা হলে বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দকে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়। প্রতি মাসে বিষয়গুলির অগ্রগতি নিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ক্যাব ও বাজার সমিতি পর্যালোচনা সভা করবে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আবদুস সাত্তার কোম্পানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব আকবর শাহ থানার সভাপতি ডা. মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, ক্যাব পাঁচলাইশ থানার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দীন, পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার মাছ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রফিক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান, পাহাড়তলী বণিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ দিদারুল হক, ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার শম্পা কে নাহারসহ পাহাড়তলী বণিক সমিতির নেতৃবন্দ।