মো. দেলোয়ার হোসেন : টমেটো ক্ষেতে রোগবালাইয়ের কারণে ৩০-৭০ ভাগ ফলন কমে যায়। তাই টমেটো ক্ষেতের রোগবালাই দমন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। টমেটো ক্ষেতে সাধারণত: ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জনিত কারনে রোগ হয়ে থাকে। ছত্রাক জনিত রোগের মধ্যে – নাবী ধ্বসা ও আগাম ধ্বসা রোগই প্রধান।
নাবী ধ্বসা : নাবী ধ্বসা রোগের লক্ষণ হলো পাতার নিচে সাদা পাউডারের মত রোগ জীবানু দেখা যায়। দিনের তাপমাত্রা কমে গেলে, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে, মেঘলা আকাশ ও ঘন কুয়াশায় এ রোগের আক্রমন বেশী হয়ে থাকে। এতে কচি ডগাগুলো মরে যায় এবং আক্রান্ত গাছ পঁচে যায়। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে স¤পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় এবং গাছ মারা যায়। এই রোগের প্রতিকার হিসাবে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ধ্বংশ করতে হবে এবং রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে ব্যাভিষ্টিন বা ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
আগাম ধ্বসা : আগাম ধ্বসা রোগের আক্রমনের লক্ষণ প্রথমে গাছের বয়স্ক পাতায় দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে গোল গোল দাগ দেখা যায় এবং পড়ে কচি পাতাগুলো আক্রান্ত হয়।
এই রোগের প্রতিকার হিসাবে রোগমুক্ত ও সহনশীল জাতের টমেটো বীজ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে ব্যাভিষ্টিন বা রোভরাল গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানির সাথে মিশিয়ে এক সপ্তাহ পর পর অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া : ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের মধ্যে ঢলে পড়া খুবই মারাত্বক রোগ। এই রোগে গাছের কচি ও নরম পাতাসহ শাখা-প্রশাখা প্রখর রোদে ঢলে পড়ে এবং রাতে সবুজ অবস্থায় মারা যায়। এই রোগে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ধবংস করতে হবে।
ভাইরাস: ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে মোজাইক ভাইরাস খুবই মারাত্বক রোগ। এ রোগে পাতার কিনারাসহ সমস্ত পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে সমস্ত গাছই মরে নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগের লক্ষণ দেখা মাত্র গাছ তুলে ধবংস করে ফেলতে হবে।
পোকামাকড় : টমেটো ক্ষেতে বিভিন্ন পোকামাকড় ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। এর মধ্যে জাব পোকা, ফল ছিদ্রকারি পোকা ও সাদামাছি উল্লেখযোগ্য। এসকল পোকা দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
জাব পোকা : টমেটো ক্ষেতে জাব পোকা মারাত্বক ক্ষতি করে থাকে। জাবপোকার বাচ্চা ও পূর্ণাঙ্গ পোকা গাছের কচি ও নরম অংশ থেকে রস চুষে খায় ফলে টমেটো গাছ শুকিয়ে অবশেষে মারা যায়। এই পোকা দমনে ম্যালাথিয়ন বা সাইপারম্রেথিন গ্রুপের কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে দমন করা যায়। এছাড়া সাবান গুলা পানি স্প্রে করেও দমন করা যায়।
ফল ছিদ্রকারি পোকা : টমেটোর ফল ছিদ্রকারি পোকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পোকা। এ পোকার কীড়া প্রথমে পাতা ও ফুল খায় এবং পরে ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খাওয়া শুরু করে। এতে ফলের শাঁস নষ্ট হয় এবং ফলে পঁচন ধরে। এই পোকা দমনে ডেসিস বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।
সাদা মাছি পোকা : টমেটোর আর একটি মারাত্বক ক্ষতিকর পোকা সাদা মাছি। এ পোকা খুব ছোট এবং পাতার নিচের দিকে থাকে বলে খালি চোখে দেখা যায় না। এই পোকা টমেটোর পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগের বাহক হিসাবে কাজ করে। এই পোকা দমনে রগর বা রক্সিয়ন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।
ফসল সংগ্রহ : টমেটো পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহ করে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পাকা শুরু হলে বাজারজাত করতে হবে। টমেটো জাতভেদে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টন পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে।
লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী।