চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: গত বেশ কয়েক মাস ধরে একবার পেয়াঁজ, একবার চাল, একবার সয়াবিন এবং সর্বশেষ আলুর মূল্যবৃদ্ধি করে নিত্যভোগ্য পণ্যের বাজারে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস তৈরি করছে। পেয়াঁজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কারসাজি করার পর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট দেশের বৃহত্তর পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা পরের দিন ধর্মঘট ডেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে জেলা প্রশাসন খাতুনগঞ্জে আর অভিযান পরিচালনা করে নাই। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ভোক্তাদেরকে। এখন তারা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগনের জীবন যাত্রায় প্রতিকূলতা তৈরি করছে।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার মোহাম্মদনগরে ক্যাব আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন। বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা নিত্যভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ শুনা গেলেও সেগুলো কোন কাজে আসছে না। আর সরকারের এই বিফলতার জন্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে বিশাল আকারের বৈষম্যই দায়ী মনে করছেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ। সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও ট্রেড বড়িগুলির সক্ষমতা অনেক বেশী হয়ে আছে। সেকারনে তারা অতি সহজেই সরকারকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হচ্ছে। আর সেকারনে ভোক্তাদের স্বার্থগুলি বারবার উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সংগঠনের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাগিদ জানানো হয়।
ক্যাব বায়েজিদ -এর আহবায়ক সানিয়া কবির সানির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব পাঁচলাইশ থানার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবিএম হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন স্বপন, যুগ্ন সম্পাদক এম এ শাহীন, মোহাম্মদ নগর মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল বাহার, মোহাম্মদ নগর ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সভাপতি গোলাম তানবীর, ইকরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমদ, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, যুবলীগ নেতা সুজন মাহমুদ প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের নিজস্ব সংগঠন আছে এবং তারা নিজস্ব উৎস থেকে সম্পাদ আহরন ও সরকারী বেসরকারী সহযোগিতা পাবার কারনে তাদের সক্ষমতা তৈরি হয়ে আছে। অন্যদিকে দেশের ভোক্তারা অসংগঠিত ও তাদের সংগঠনগুলির কোন সক্ষমতা তৈরি হয়নি। ফলে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল সবকিছুকে অতি সহজে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে নিত্যভোগ্য পণ্যের বাজারসহ ব্যবসা সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তারা প্রশাসনকে সহজে প্রবাভিত করতে পারে।
বক্তারা আরো বলেন, চট্টগ্রামে খাবারে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করে যেগুলি ফুডগ্রেড বলে চালানো হলেও প্রকৃতপক্ষে এ রঙগুলি কাপড় ও ওয়ালের রঙ। বিভিন্ন খাবার ও বেকারী খাদ্যে ফুড কালারের নামে যে রঙ দেয়া হচ্ছে তার সবটুকুই বিষ। সে কারণে দেশের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার সিংহভাগই চট্টগ্রামের। অপরিস্কার অপরিছন্ন পরিবেশে খাদ্য রান্না ও পরিবেশেন, মানহীন খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ, মানহীন রান্নার তেল ও ঘি, মাছে জেলি ব্যবহার, ওজনে কম দেয়া, শাক-সবজিতে বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার, দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা, দেশী মুরগির কথা বলে সোনালী মুরগি বিক্রি, অপরিস্কার পরিবেশে মুরগি জবাই ও বিক্রি, ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়ীদের অসৌজন্যমুলক ব্যবহারের কারনে ক্রেতা-ভোক্তাদের অধিকার শুধু ক্ষুন্নই হচ্ছে না। এর বাইরে সরবরাহ সংকটের কথা বলে নিত্যভোগ্যপন্যের লাগামগীন মূল্যবৃদ্দি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আবার এ সমস্ত ব্যবসায়ীরা একটি পণ্যের ব্যবসা করলেও ১০টি পণ্য ও সেবা বাইরের থেকে কিনতে হচ্ছে। ফলে পুরো সমাজটিই যেন লুটপাটের হাট। যে যেভাবে পারে লুটপাট করে জনগনের পকেট কাটছে।