ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার আটরা শিল্পাঞ্চলে বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল চালু করাসহ ১৪ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধকালে পুলিশের সাথে পাটকল শ্রমিক ও আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দেও সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১১ জন পাটকল শ্রমিক। আহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ। একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ ৬ জনকে আটক করেছে। আটকৃতরা হলেন, মো. আবুল হোসেন, মো. নওশের, শহিদুল, ওলিয়ার রহমান, রবিউল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর সরদার। সোমাবার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ইস্টার্ন গেটে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদে ব্যানারে খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে শ্রমিকরা। ১১ মিনিট পর পুলিশ মহাসড়কে এসে তাদের তুলে দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আহত শ্রমিকরা হলেন- নাজমা খাতুন, খাদিজা বেগম, হাফিজা বেগম, সুমি রায়, শেফালী বালা, সুচিত্রা বিশ্বাস ও সাফিয়া বেগম।
অবিলম্বে বন্ধকৃত ২৫ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, আধুনিকায়ন করা, অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরত, বদলী, অস্থায়ী সকল শ্রমিকের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ করাসহ ১৪ দফা দাবিতে সকাল ১০টায় ইস্টার্ন জুট মিলের গেটে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক নেতারা ও শ্রমিকরা একত্র হয়ে সমাবেশ করেন। পরে তারা খুলনা-যশোর মহাসড়কের আটরা শিল্পাঞ্চলের পথ অবরোধ করেন। এসময় খুলনামুখী গাড়ি আটকা পড়ে এবং খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পরিবহন গুলো বিকল্প পথ ধরে চলাচল করে। শত শত মানুষকে পায় হেঁটে এলাকা অতিক্রম করতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মত। এ সময় পুলিশের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পাটকল শ্রমিকরা তা মানতে রাজি হননি। পরে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে স্টার জুট মিলের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) এডিসি (উত্তর) সোনালী সেন বলেন, শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত মিডিয়া সেল থেকে জানানো হবে।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ ভাবে পূর্ব ঘোষিত অবরোধ শুরু করে। পাটকল শ্রমিক আন্দোলন দমাতে খুলনার আইনশৃংখলা বাহিনী মিল বন্ধের নোটিশ দেয়ার আগেই শিল্পাঞ্চলে জলকামানসহ অবস্থান নেয়। যাতে কোন পাটকল শ্রমিক রাস্তায় আন্দোলন করতে না পারে । ইতিমধ্যে খালিশপুরে আমাদের আন্দোলন পথিহত করতে সরকারী দলকে দিয়ে পাল্টা সভা ডেকে আমাদরে নেতাকর¥ীদের গ্রেফতার করা হয়েছে । আজকের শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে পুলিশ সকলকে তুলে দেয়ার পর উত্তজনা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, এই করোনাকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ করে ৫০ হাজার শ্রমিককে কর্মহীন করা এবং লক্ষাধিক মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চরম নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ। পাটশিল্প সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পাটচাষিসহ প্রায় তিন কোটি মানুষ নতুন করে ক্রমান্বয়ে দারিদ্র সীমার নীচে নেমে যাচ্ছে। পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের নেতারা বলেন, বিজিএমসির দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে পাটকলে লোকসান হয়েছে। লুটপাটের জন্য পাটকল ও পাটশিল্প আজ ধ্বংসের পথে। অথচ বিজিএমসির দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে সৃষ্ট লোকসানের দায় সাধারণ পাটকল শ্রমিকদের ওপর চাপাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের অন্যায় শাস্তির ফল ভোগ করছেন শ্রমিকেরা। অথচ বিজেএমসি মাথাভারী প্রশাসন এখন বসে বসে লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন নিচ্ছেন নেতৃবৃন্দরা অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালুর দাবি জানান তারা।
শ্রমিক নেতারা আরও জানান, করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক শ্রমিকের জীবন চলছে পেশার বদল ঘটিয়ে মানবেতরভাবে। কর্মহারা এ শ্রমিকদের কেউ কেউ সহজ পেশা হিসেবে রিকশা চালাচ্ছেন। কেউবা ফল বিক্রেতা কিংবা নির্মাণ শ্রমিকের কাজেও নেমেছেন। আর এখনও কাজ জোগাড় করতে না পেরে বেকার জীবন পার করছেন অনেকে। ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির আহবায়ক ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য মুনীর চৌধুরী সোহেল বলেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এর ফলে ২ জন শ্রমিক গুরুতর জখম হয়েছে। শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও শ্রমিক নেতা শামসেদ আলম, নাগরিক পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য মোজাম্মেল হক খান আজকের অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
এ কর্মসূচি সফলের লক্ষে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে গত ১৫ অক্টোবর বিকাল ৪টায় ফুলতলা ইস্টার্ন জুট মিল গেটে শ্রমিক সমাবেশ, ১৬ অক্টোবর বিকাল ৪টায় পিপলস গোলচত্বরে ছাত্র-যুব-নারী-কৃষক-খেতমজুর ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপস্থিতিতে সংহতি সমাবেশ এবং ১৭ অক্টোবর বিকাল ৪টায় রাজঘাট কেজি স্কুল চত্বরে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।