শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪

জলপাই হতে পারে সম্ভাবনাময় এক বাণিজ্যিক ফল

কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল : ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে জলপাইয়ের বা জয়তুনের আদি বাসস্থান। পরবর্তীতে এ ফল এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই একটি অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাকা সব অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি তৈরিতে সর্বাধিক ব্যবহার হয়। পাকা ফলে প্রজাতিভেদে ১৫-৪০ % তৈল থাকে এবং উহাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। জলপাইকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- আরবীয় ঝলপাই বা জয়তুন (Olive) যা মরুভ’মির দেশসমুহে ভালো জন্মে এবং তৈল তৈরীতে বেশী ব্যবহার হয়। দ্বিতীয় হলো ভারতীয় জাত (Indian Olive) যা ফল হিসাবে খাওয়া ও আচার, চাটনি তৈরিতে বেশী ব্যবহার হয়।

ইংরেজি নাম : Olive,

বৈজ্ঞানিক নাম : Elaeocarus floribundus

উদ্ভিদ তত্ত্ব : জলপাই একটি সুউচ্চ বৃক্ষ এর পাতা উপবৃত্তাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সুচাঁলো, ফল উপবৃত্তাকার। ফল পাকার পরও সবুজ থাকে এবং তৈলাক্ত শাঁসযুক্ত। ভূমধ্যসাগরীয় আবহাওয়াতে এ ফল ভালো হয় কিন্তু উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়াতে বেশী ভালো হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে ভারতীয় অঞ্চলের টক জলপাই (Indian Olive) ভালো জন্মে তাই একে দেশী জলপাই হিসাবে ধরা হয়।

বংশ বিস্তার : বীজের মাধ্যমে সাধারনত বংশ বিস্তার করা হয়। বীজাবরণ খুব শক্ত তাই বীজ ২৪-৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজে রাখলে তাড়াতাড়ি গজায়। চোঁখ কলম, গুটি কলম, শাখা কলম প্রভৃতির দ্বারাও বংশ বিস্তার করা যায়। চারা রোপনের জন্য ৮-১০ মিটার দুরে দুরে গর্ত খুড়ে প্রতিটি গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর, ৪-৫ কেজি ছাই দিয়ে রোপন করলে গাছ ভালো হয়।

পরিচর্যা : বাণিজ্যিকভাবে জলপাই চাষ করলে বা ভালো ফলন পেতে হলে প্রতি বছর একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে ৩০ কেজি গোবর বা কম্পোষ্ট, ৫০০ গ্রাম ইরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম পটাস সার দিতে হবে। দুপুর বেলা গাছের ছায়া যতটুকু স্থানে পড়ে সে স্থানের মাটি কোদাল দিয়ে আলগা করে সারগুলি মিশে দিতে হবে।

পুষ্টিগুণ : জলপাই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। এতে ক্যালসিয়াম ও লৌহ থাকে।

পুষ্টি উপাদান : (প্রতি ১০০ গ্রামে) উপাদান পরিমাণ জলীয় অংশ ৮২ (গ্রাম)  মোট খনিজ পদার্থ ০.৭ (গ্রাম) হজমযোগ্য আঁশ ১.৬  (গ্রাম) খাদ্যশক্তি ৭০ (কিলোক্যালরি) আমিষ ১.০ (গ্রাম) চর্বি ০.১ (গ্রাম) শর্করা ১৬.২ (গ্রাম) ক্যালসিয়াম ২২ (মিলিগ্রাম) লৌহ ৩.১ (মিলিগ্রাম) ক্যারোটিন (মাইক্রোগ্রাম) – ভিটামিন-বি১ ০.০৩ (মিলিগ্রাম) ভিটামিন-বি২ ০.০১ (মিলিগ্রাম) ভিটামিন-সি ৩৯ (মিলিগ্রাম)

ঔষধিগুণ : জলপাইয়ের তেল ম্যাসাজ অয়েল, প্রলেপ ও রোচক হিসাবে ব্যবহার হয়।

উৎপাদন এলাকা : বাংলাদেশের সব জেলাতেই চাষ হয়। তবে কুমিল্লা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, নোয়াখালী জেলায় বেশি উৎপন্ন হয়।

ব্যবহার : জলপাই থেকে চাটনি ও আচার তৈরি করা হয়।

ফলন : বর্ষার প্রাম্ভে গাছে ফুল আসে এবং শীতের পূর্বেই ফল পাকে। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ থেকে বছরে ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

জলপাই গাছে তেমন কোন পোকামাকড় ও রোগ বালাই আক্রমন করে না এবং বাংলাদেশের মাটিতে যে কোন স্থানে সহজে জম্মাতে পারে। তাই এ পুষ্টি সম্দ্দৃ ফলটি চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফল বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলকি প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।

This post has already been read 7062 times!

Check Also

জলঢাকায় সোনালী ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

বিধান চন্দ্র রায় (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। …