বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ১৯ ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলছে মা ইলিশ শিকার ও বিক্রি

মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর) : চাঁদপুরের মতলব উত্তরে প্রশাসনের অভিযানের পরও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হচ্ছেনা মা-ইলিশ শিকার। সরকারের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রজনন মৌসুমে একশ্রেণির অসাধু জেলে নির্ভয়ে প্রতিনিয়ত মাছ শিকারে নামছেন নদীতে।

আইন অমান্য করার প্রবণতার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী মহলের তৎপরতায় মা-ইলিশের নিধনযজ্ঞ চলছেই। ফলে এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ প্রাপ্তি হুমকির মুখে দাড়িয়েছে।

প্রজনন মৌসুমে ইলিশের বংশ বিস্তারে সরকার ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছেন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরব পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে।

তবে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মতলব উত্তরে মেঘনার আশপাশের চরাঞ্চলে যেন মাছ ধরার উৎসব শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জেলেরা।

জেল-জরিমানা এমনকি সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই অবাধে চলছে ইলিশ নিধন। জেলেরা নৌকা-বাইচে প্রতিযোগিতা মাধ্যমে দিন-রাত পালাক্রমে ইলিশ শিকার করে চলেছে।

অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা কৌশলে গ্রামের বিভিন্ন ঝোপ-জঙ্গলে কিংবা হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি করছে ইলিশ। অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীরাও। আইনি ঝামেলা এড়াতে মা-ইলিশ বিক্রি ও ধরার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বোরচর, ষাটনল বাবুরবাজার, সিকিরচর সওদাগর বাড়ি সংলগ্ন, দশানী, মোহনপুর এবং বাহাদুরপুর, মেঘনা তীরবর্তী সংযুক্ত শাখা খালগুলো সহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মা-ইলিশ। এছাড়াও রাতের আধাঁরে এলাকাভিত্তিক একশ্রেনীর সিন্ডিকেট বস্তা বোঝাই ইলিশ ট্রাকে করে দূর-দূরান্তে পাচারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে।

প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় টাস্কফোর্সের বিভিন্ন টিম কাজ করলেও অসাধু জেলেদের মা ইলিশ নিধনের এমন অপতৎপরতার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নৌ-পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ-সাজোশ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি মালেক দেওয়ান বলেন, কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ট্রলারপ্রতি টাকা উত্তোলন করে টোকেন বানিজ্য করে থাকে। এর কারণেই নির্ধিদায় জেলেরা নদীতে মাছ ধরা ও অবাধ বিক্রি নিশ্চিত করতে পারে’।

মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ হোসেন সরকার বলেন, ‘কোনভাবেই জেলেদের ছাড় দেওয়া হচ্ছেনা, দিনে-রাতে আমাদের ২টি টিম নদীতে কাজ করছে। জেলেদের বেপোরোয়া আচরণকে উপেক্ষা করেই আমরা কাজ করছি’।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা কঠোরভাবে এ বছর অভিযান পরিচালনা করছি। তবে গত কদিনের নিম্নচাপের কারণে অভিযান পরিচালনা করতে কষ্ঠসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। এরমাঝে কিছু জেলেরা মা ইলিশ ধরছে জেনেছি। নদী পাড়ের স্থলপথগুলোতে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নেহাশীষ দাশের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে নদীতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৩টি অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ সহ ৮ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও অপর ৮ জেলেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। জব্দকৃত কারেন্টজাল পরে ধ্বংস করা এবং উদ্ধারকৃত মাছ স্থানীয় মাদ্রাসায় এতিমদের মধ্যে বিতরন করা হয়। সরকার ঘোষিত সময়ে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।

This post has already been read 2748 times!

Check Also

প্রশিক্ষিত হয়ে ক্যাডেটরা হতে চলেছে গভীর সমুদ্রের অকুতোভয় কান্ডারী- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মেরিন ফিশারিজ একাডেমি হতে প্রশিক্ষিত হয়ে …