ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন শিল্প বলতে বিশ্বখ্যাত নয়নাভিরাম সুন্দরবনকেই বোঝায়। সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। সারা বছর দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে সুন্দরবন উপকূল। তবে বর্ষার পরেই সাধারণত নভেন্বর মাস থেকে সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। সে হিসেবে, এখনই সময় পর্যটকদের প্রাকৃতিক নৈর্গিক সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগের। বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে সুন্দরবন বন বিভাগ গত ১৯ মার্চ সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবনের ৯টি পর্যটন এলাকায় পর্যটক ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক কর্মজীবিদের বনে প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাজারি করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা দর্শনার্থীরা। চরম আর্থিক হুমকির মুখে পড়েন ট্যুর অপারেটর ও সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। করোনার প্রকট কমতে থাকায় ইতিমধ্যে সুন্দরবনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন মানববন্ধন পালন করেন। চলতি নভেন্বর থেকে শুরু পর্যটন মৌসুম সময়টাতেই যদি পর্যটন বন্ধ থাকে, তাহলে একদিকে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হবে অন্যদিকে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পটি বিধ্বস্থ হয়ে যাবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন দাবীর বাস্তবতায় সরকারের বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রনালয় সুন্দরবনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বিষয় সম্প্রতি বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সুন্দরবনকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেবার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রেঞ্জ ও বিভাগীয় পর্যায়ে দু/একদিনের মধ্যেই অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আসছে শীত, পর্যটনের সেরা মৌসুম। পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ থাকার পর বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে প্রবেশাধিকার ভ্রমন পিপাসুদের জন্য সুখবর। আসছে নভেম্বরের শুরু হওয়া পর্যটন মৌসুম শুরুতেই প্রার্কৃতিক সৌন্দর্য্যের লিলাভুমি অপরূপ সৃষ্টি সুন্দরবনের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে পর্যটকদের জন্য। দীর্ঘ ৭মাস বন্ধ থাকার পর প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরবে বিশ্বখ্যাত সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে।
বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী ও রামপাল-মোংলা সংসদীয় আসনের সংসদ বেগম হাবিবুন নাহার জানান,দুই এক দিনের মধ্যেই সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বনবিভাগ। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি তো ইতোমধ্যেই মৌখিকভাবে অনেককেই বলে দিয়েছি। ট্যুর অপারেটরদেরও প্রস্তুতি নিতে বলেছি। কোন অসুবিধা নেই। তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একটি জাহাজে ৫০ জনের বেশি যাওয়া যাবে না। শারিরিক ও সামাজিক সুরক্ষা দুরত্ব বজায় রেখেই সরকারি সকল স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে ট্যুর অপরারেটর ও পর্যটকদের। দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক ভ্রমন পিপাসুরা যেন স্বাস্থবিধি মেনে বিশ্বখ্যাত প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে বন বিভাগ সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সংবাদে প্রানচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ট্যুর অপারেটর মালিক,কর্মকর্তা,কর্মচারী ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক বন জীবিদের মাঝে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলরা বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের প্রতি জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা। পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশির আল মামুন এবং পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, বন অধিদপ্তরের নির্দেশনা হাতে পেলেই যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বন বিভাগ চলতি অর্থবছরে সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে কোনো রাজস্ব আয় হয়নি। বিগত (২০১৯-২০২০) অর্থ বছরে রাজস্ব আহরন হয়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকা এবং পশ্চিমে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল।