নিজস্ব প্রতিবেদক: সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে সরকার ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত ‘সুনীল অর্থনীতিতে সীউডের সম্ভাবনাঃ গবেষণা অগ্রগতি ও বাণিজ্যিকীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা জানান।
বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ ও সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোধ বোস মনিসহ মন্ত্রণালয় ও বিএফআরআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য খাতের উদ্যোক্তা ও মৎস্য চাষিগণ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সমুদ্রের সকল সম্পদ আহরণ করবো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “গভীর সমুদ্রের নিচে মূল্যবান মৎস্য সম্পদ রয়েছে। আমরা সেটা আহরণ করবো। এ লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে সমুদ্র থেকে টুনা মাছ আহরণের প্রকল্প নিয়েছি। এই মাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র সম্পদে আমরা পরিপূর্ণতার জায়গায় পৌঁছাবো। অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে সিউডসহ সকল সমুদ্র সম্পদ বিকশিত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা সরকার নেবে।”
মন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সিম্বলিক সেন্টার বলতেন। কেউ কেউ বলতেন তলাবিহীন ঝুড়ি। বিভিন্ন সময়ে এখান থেকে অনেকে অনেক সম্পদ নিয়ে গেলেও মৌলিক সম্পদ নিয়ে যেতে পারেননি। সেটা হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানুষের দৃঢ়চেতা মনোবলের সম্পদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। সেকারণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সমুদ্র সংক্রান্ত আইন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশের সম্পদ দূরদৃষ্টি নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্বের সেরা কূটনীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশের সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি। সমুদ্রের বিশাল সম্পদকে কীভাবে আহরণ করা যাবে শেখ হাসিনা সে পরিকল্পনা নিয়েছেন। সেটাকে তিনি নাম রেখেছেন সুনীল অর্থনীতি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা একের পর এক পরিকল্পনা নিয়েছেন। আমাদের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা সমস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করবো।”
মন্ত্রী আরো বলেন, “করোনাকালে পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা আসলেও আমাদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বিকশিত হয়েছে। ইলিশ আহরণে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা অনেক বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমরা জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনার কারণে। তিনি সমকালীন বিশ্ব সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস ম্যানেজার। দেশীয় ও বিদেশ থেকে আসা বেকারদের আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করবো। তারা মৎস্য বা প্রাণিসম্পদ খাতে যেখানে কাজ করতে চায় আমরা সহায়তা দেবো। আমরা তাদের প্রণোদনা দিচ্ছি, সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছি। যাতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে একজন মানুষও বেকার না থাকে, একজন মানুষও যেনো ক্ষুধার অভাবে কষ্ট না পায়।”
পরে সুনীল অর্থনীতিতে সীউডের সম্ভাবনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ গ্রহণ ও কার্যকর করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
সেমিনারে বিএফআরআই-এ চলমান ‘বাংলাদেশ উপকূলে সীউইড চাষ এবং সীউডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মহিদুল ইসলাম ও উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মুহাম্মদ তানভীর হোসেন চৌধুরী উপস্থাপিত দুটি প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-এর অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।