ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনায় চালের দাম বেড়েই চলেছে। দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার। দেশব্যাপী মহামারী করোনার তান্ডবের মাঝে চালের চড়া মূল্য মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে অন্তত দুইশ’টাকা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। মিনিকেট চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয় চালকল মালিকদের সাথে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর হয়নি। তিন কারণে চালের দাম বাড়তির দিকে। এমনই অযুহাত খাড়া করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। তবে বাজারদর মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় সিন্ডিকেট ও কারসাজির মাধ্যমে কৌশলে পকেট কাটছে ভোক্তাদের। ফলে বিপাকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, আঠাশ বালাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, বাসমতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪২ টাকা, আঠাশ বালাম ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা, বাসমতি ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ সপ্তাহখানেক আগে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৪২ টাকা, আঠাশ বালাম ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, বাসমতি ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাইকারী বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল (স্বর্ণা) ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, আঠাশ বালাম ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, বাসমতি ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, তিন কারণে চালের বাজার উর্ধ্বমুখি হয়ে উঠেছে। প্রথমতঃ মোটা ধানের উৎপাদন কম। তাই ধান সংকটে তাঁরা চাহিদামত চাল সরবরাহ করতে পারছেন না। দ্বিতীয়তঃ ধানের দাম বেশি। তৃতীয়তঃ চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম। খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর চালকল মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে মাঝারি ও সরু চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সেই অনুযায়ী সরু মিনিকেট ৫১ টাকা ৫০ পয়সা ও মাঝারি চাল ৪৫ টাকা কেজি ধরা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও অক্টোবর মাস শেষ হলেও মানছে ব্যবসায়িরা। চালকল মালিকদের সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাবই পড়েনি খুলনার বাজারে। আঠাশ বালাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্যই সরু মিনিকেট চাল সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করছেন মিল মালিকরা।
নগরীর বড় বাজার এলাকার মেসার্স রাজিব ট্রেডাসের স্বত্তাধিকারী রাজিব বলেন, ‘পাইকারী বাজরে চালের দাম কেজি প্রতি অন্তত দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ধান বাজারে না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম কমছে না। বাজারে চালের সরবরাহ কম, ফলে বাজার উর্ধ্বমুখি। একইভাবে মেসার্স দিনাজপুর ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘নতুন ধান বাজারে না ওঠা পর্যন্ত ধানের দাম বেশি, বাজারে চালের সরবরাহ অনেক কম এসব কারণেই চালের বাজার বাড়তি। তবে নতুন ধান বাজারে আসা শুরু করলে চালের বাজার নেমে আসতে পারে।
নগরীর স্ট্যান্ড রোডস্থ কেসিসি সুপার মার্কেটে আসা ক্রেতা কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু চাল নয়, সবজিসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে । ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মার্চ মাস থেকে মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। সাধারন মানুষের আয়-রোজগারও কমে গেছে কিন্তু কমছে না নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যসামগ্রীর দাম। দাম যাতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে এজন্য সংশি¬ষ্ট দপ্তরগুলোতে দায়িত্বশীলদের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। বাজারে আসা ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, চালের দাম অনেক বাড়তি। চালের বাজার যাতে নিয়ন্ত্রণে আসে সেজন্য তিনি কৃষি ও খাদ্য দপ্তরের উর্ধ্বতন মহলের জোরালো পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
মহানগরীর বড় বাজারে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. খায়রুল আলম, মো. সাহেব আলী, মো. রবিউল ইসলাম বলেন, চালের দাম কেজি প্রতি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তি। অর্থাৎ, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) বৃদ্ধি পেয়েছে ২শ’টাকা। এসব ব্যবসায়ীরা বলেন, মোকাম থেকে চড়াদামে চাল কিনতে হচ্ছে, বিধায় খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তবে এসব ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ধান বাজারে না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম কমবে না।