বুধবার , ডিসেম্বর ১৮ ২০২৪

উপকূলীয় খুলনায় উচ্চফলনশীল সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা উপকূলীয় এলাকায় চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঠে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে সুগন্ধি ধানের চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে । মাত্র তিন কাঠা জমিতে চাষ করা এই উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রিধান-৯০ জাতের ধানে। চিকন দানার এই সুগন্ধি ধানের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৫ টন হওয়ায় তা এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে এ এলাকায় স্থানীয় বড়ান জাতের ধানের মাঠ এখনও সবুজ এবং কেবল পুষ্পায়ন হচ্ছে। এসব ধান কাটতে আরও প্রায় দু’মাস সময় লাগবে। কিন্তু একই সময় রোপণ করে মাত্র ১১৮ দিনেরও কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় এ উদ্ভাবিত ব্রিধান-৯০ জাতটি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে।

যেসব জমি মাঝারি উঁচু এবং উঁচু সেখানে এ ধান চাষ করে মধ্য কার্তিকেই ধান কাটার পর সেখানে রবিশস্য চাষ বিশেষ করে সরষে, আলু, শাক-সবজি করা সম্ভব হবে। সাধারণত ডুমুরিয়া,দাকোপ,বটিয়াঘাটা এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক নাবিতে পাকায় নতুন কোনো ফসল চাষ করা যায় না। ফলে এলাকার বেশিরভাগ জমি এক ফসলি এবং তা বছরের ৭-৮ মাসই পড়ে থাকে। ব্রিধান-৯০ একদিকে মাত্র চার মাসের মধ্যেই পাকে এবং ফলনও বেশি। স্থানীয় রাণী স্যালট, জটাই, হরকোচ, ভাটেল ধানের হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে তিন থেকে চার টন। সেখানে ব্রিধান-৫ টন পর্যন্ত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

বৃহত্তর খুলনা উপকূলীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে  এই উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধানের চাষ হওয়ার খবর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছেও নেই। এমনকি বটিয়াঘাটার দাউনিয়াফাদ গ্রামে চাষ হওয়া ব্রিধান-৯০ সর্ম্পকেও খুব কম লোকে জানে। বটিয়াঘাটা গুপ্তমারি গ্রামের কৃষক রণজিত রায় প্রথম এ ধানের চাষ করেন। তাকে ব্রি থেকে কেজি বীজ সংগ্রহ করে দেন একজন সৌখিন ধান চাষী। ধান পাকার পর ফলন দেখে অনেক কৃষকেরই এই ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

রণজিত রায় তার তিনকাঠা বর্গা জমিতে তিন মণ সুগন্ধি ধানের ফলন পাওয়ায় খুবই খুশি। তিন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন ‘এতো অল্প জমিতে চিকন সুগন্ধি ধানের এভাবে ভাল ফলন পাবো ভাবতেই পারিনি। এলাকার অনেকেই বীজ চেয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ দেড় থেকে দু’শ টাকা দর চেয়েও আগ্রহী চাষী নিচ্ছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনই নিয়েছেন ২মণ বীজ। তিনি আগামী বছর ৩ একর জমিতে এ ধান চাষ করতে চান।

দাইনিয়াফাঁদ গ্রামের কৃষাণী আরতি রায় বলেন, এমন সুন্দর ছোট ছোট দানার ধানের এতো ভালো ফলন আগে কখনও দেখিনি। তাছাড়া আমরা যখন আমন ধান কাটি তখন পৌষ মাস। তার ২ মাস আগে এখন এ ধান পেকেছে এটাও বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, আমি এর নাম দিয়েছি ‘মুসরি দানা’।

এলাকার কেউ বলছেন বেগুন বিচি। আবার কেউ নাম দিয়েছেন স্বর্ণালী ভোগ। মুক্তার মতো ছড়ায় গাঁথা ধানের চালের ভাত খেতে সুস্বাদু এবং তাতে সুগন্ধ থাকায় পোলাওসহ বিভিন্ন উৎসবে রান্নার উপযোগী এ ধানের চাল। এ ধানের চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য বলছেন ব্রির বিজ্ঞানিরা। কেবল খুলনা উপকূলীয় এলাকাতেই নয়, সারাদেশে আগাম আমন ধান হিসেবে ব্রিধান-৯০ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এমনটাই আশা করেন উদ্ভাবক ব্রির বিজ্ঞানিরা। মাত্র ২০১৯ সালে এই জাতটি মাঠ পর্যায়ে চাষে ছাড়পত্র দেয় বীজ প্রত্যায়ন বোর্ড।

This post has already been read 3736 times!

Check Also

কলাপাড়ায় পাটজাতীয় ফসলের আঁশ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল): পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিজেআরআই উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাটজাতীয় ফসলের আঁশ …