Monday , March 31 2025

ধান চাষে পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতির ওপর রাজশাহীতে দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ

মো. আব্দুল্লাহহিলকাফি (রাজশাহী): কোকাকোলা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এবং সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার প্রজেক্টের আয়োজনে ধান চাষে পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে শুকানো ও ভিজানো (AWD) -এর ওপর মঙ্গলবা ((২৪ নভেম্বর) দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রশিক্ষণে ঐ প্রকল্প এলাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিপ টিউবওয়েলের অপারেটরগণকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামছুল হক, কষি তথ্য সার্ভিসের আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম এবং এসিস্টেন্ট ম্যানেজার মো. মনিরুল ইসলাম ও ডাসকো ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকরামুর হক অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।

প্রশিক্ষণে আলোচকগণ বলেন, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য সেচ প্রদান অপরিহার্য। আর বোরো ধান উৎপাদনের সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যপক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসেছে। কৃষকরা বোরো ধান ক্ষেতে কিছু না কিছু দাঁড়ানো পানি রেখে থাকেন। ফলে ধান উৎপাদন করতে প্রচুর পানির দরকার হয়। মাটি ভেদে এক ১ কেজি ধান উৎপাদন করতে কৃষকরা ৩০০০ থেকে ৪০০০ লিটার পানি ব্যবহার করে থাকেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে,ভাল ফল পাওয়ার জন্য ধান ক্ষেতে সব সময় দাঁড়ানো পানি রাখার প্রয়োজন নেই।

এডাব্লিউডি (AWD) হলো ধান ক্ষেতে প্রয়োজন মত সেচ দেওয়ার একটি পদ্বতি। মাটিতে পর্যাপ্ত রস পানি থাকলে ধান গাছ শিকড়ের মাধ্যমে তা প্রয়োজনীয় মাত্রায় গ্রহণ করতে পারে। ধান ক্ষেতে একটি ছিদ্র যুক্ত প্লাষ্টিক বা বাঁশের পাইব বসিয়ে মাটির ভিতরের পানির স্থর পর্য়বেক্ষণ করে সেচ দেয়াই হলো এ পদ্বতির বৈশিষ্ট্য।

এডাব্লিউডি (AWD) পদ্ধতির সুবিধা হলো- এ পদ্বতিতে সেচ প্রদান করলে সেচ পদ্বতির চেয়ে প্রায় ২০/২৫ ভাগ সাশ্রয় হয়। এটি সহজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে সাশ্রয় কৃত পানি দিয়ে অধিক জমি চাষে আওতায় আনা যায়। ধান চষে পর্যায় ক্রমে জমি শুকনো ও ভেজা রেখে পরিমিত সেচ প্রদানের মাধ্যমে মূল্যবান সেচের পানি ও জ্বালানি সাশ্রায় করা ও সেচ খরচ কমানো ও সম্ভব।

এডাব্লিউডি (AWD) পদ্ধতির বর্ননায় বলেন-

  • মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকলেই ধান প্রয়োজনীয় পানি নিতে পারে তাই বেশী পানি দেয়ার প্রয়োজন হয়না। ধান ক্ষেতে একপি ছিদ্র যুক্ত প্লাষ্টিক বা বাঁশের পাইপ বসিয়ে ভিতরের পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করে সেচ দেয়াই হলো এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। এ পাইপের ব্যাস ৩-৪ ইঞ্চি এবং লম্বা ১২ ইঞ্চি। পাইপের ওপরের দিক ৪ ইঞ্চি ছিদ্র থাকেনা এবং নিচের ৮ ইঞ্চি ছিদ্র থাকে।
  • পাইপটিতে ২ ইঞ্চি পরপর ৩ সুত ব্যাসের ছিদ্র করতে হয়।পাইপের ওপরের ৪ ইঞ্চি মাটির ওপর এবং নিচের ৮ ইঞ্চি মাটির নিচে থাকে যার মাধ্যমে সহজেই মাটির পানি পাইপে ঢুকতে পারে।
  • চারা রোপনের ১৫ দিন ১ ইঞ্চি দাড়ানো পানি রাখতে হবে। এরপর থেকে এডব্লিউডি (AWD) পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তবে জমিতে আগাছার উপদ্রপ হলে দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবসাথা করতে হবে।
  • জমির পানি পাইপের ৮ ইঞ্চি নিচে গেলে সেচ দিতে হবে যতক্ষন পানি পাইপের ২ ইঞ্চি মনিচে না আসে। সাধারনত পানি শুকাতে ৫-৮ দিন সময় লাগে। এভাবে ফুল আসা পর্যন্ত সেচ দিতে হবে।
  • ফুল আসার পর ২১ সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে সবসময় ১ ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে।

প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সিনজেনটা ফাউন্শেনের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ ফরহানুল হক এবং ডাসকো ফাউন্শেনের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

This post has already been read 2970 times!

Check Also

সিলেটে অনাবাদি জমিতে পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

মো.জুলফিকার আলী (সিলেট) : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের আয়োজনে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের “অনাবাদি পতিত …