শুক্রবার , নভেম্বর ১৫ ২০২৪

বিএলআরআই -এর নতুন নতুন গবেষণা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করছে

সাভার সংবাদদাতা: “দেশের মেধাবী গবেষকরা গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিএলআরআই এর নতুন নতুন গবেষণা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা করছে। এই গবেষণা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগছে। প্রাণিসম্পদ খাতকে সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে সকল এলাকায় প্রাণিসম্পদ খাত সংকুচিত হয়ে গেছে সেসব এলাকায় প্রাণিসম্পদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। গবেষণা ক্ষেত্রে মেধাকে আরো বেশি সন্নিবেশিত করতে হবে। সবটুকু আন্তরিকতা ও একাগ্রতা দিয়ে মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে। সরকার সকল সমর্থন দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাশমান ক্ষেত্রকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন। এমন কিছু আবিষ্কার করুন যা দিয়ে আমরা সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারি। আশা করি আপনাদের গবেষণা দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের গর্বিত করবে, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”

শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)-এর সম্মেলন কক্ষে বিএলআরআই-এর দুই দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০২০ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএলআরআই-এর বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিএলআরআই এর অতিরিক্ত পরিচালক মো. আজহারুল আমিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ্ মোঃ ইমদাদুল হক সম্মানীয় অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুবোল বোস মনি ও মোঃ তৌফিকুল আরিফ, যুগ্ম সচিব এস এম ফেরদৌস আলম, প্রাণিসসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক এবং বিএলআরআই এর বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় খাতের একটি প্রাণিসম্পদ উল্লেখ করে এ সময়  মন্ত্রী বলেন, “এ খাতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে এবং সেটাকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি। গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন জাত সৃষ্টি করতে পারছি। এর মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি-আমিষের চাহিদা মেটানো যাবে, বেকারত্ব দূর করা যাবে। খাদ্যের একটা বড় অংশ আসে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করা, উদ্যোক্তা তৈরি ও বেকারত্ব দূর করার বড় একটি ক্ষেত্রও এই প্রাণিসম্পদ। এই খাতের বহুমুখী প্রয়োজন ও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রাণিসম্পদ খাত একটি অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ক্রিয়াশীল। এই সেক্টরের বহুমুখী প্রয়োজনীয়তা ও বৃহৎ সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এখানে মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে দেশের সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে  আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএলআরআই দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের নিমিত্তে যে অসামান্য অবদান রেখেছে মন্ত্রী তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, বিএলআরআই হল দেশের প্রাণী ও পোল্ট্রিসম্পদ উন্নয়নে একটি জাতীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাদের সুপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয় যাবতীয় সহায়তা প্রদানে সদা প্রস্তুত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিএলআরআই তাদের নিজস্ব ল্যাবে জাতির ক্রান্তিলগ্নে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করছে। তিনি দেশি জাতসমূহের বিশুদ্ধতা বজায় রেখে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, ডা. আবদুল জব্বার শিকদার, মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। ইতোমধ্যে বিএলআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত বেশ কিছু প্রযুক্তি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে যা আমরা মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করছি। তাছাড়া, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ খাতকে শক্তিশালী রাখতে বর্তমান সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে ড. নাথু রাম সরকার বলেন, বিএলআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে হস্তান্তরের পরে তা মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার হচ্ছে। আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় করনীয় সম্পর্কে খামারীদের জন্য যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বিএলআরআই। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সময় উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের প্রাণিসম্পদকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএলআরআই বিজ্ঞানীদেরকে আহবান জনান মহাপরিচালক।

সভাপতির বক্তব্যের পূর্বে পূর্বঘোষিত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বিএলআরআই এর ০৩ জন কর্মকর্তা ০১ জন কর্মচারীকে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়। শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ মাননীয় মন্ত্রীর নিকট থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেণ। তাছাড়া, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়কে ক্রেস্ট প্রদান করেন ইনস্টিউটের সম্মানিত মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক জনাব মোঃ আজহারুল আমিন। দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় মোট ৬০ টি গবেষণা পত্র উপস্থাপন করা হবে। তন্মধ্যে, ৩১ টি গবেষণা পত্র মৌখিকভাবে ও ২৯ টি গবেষণা পত্র পোস্টারে উপস্থাপন করা হবে। কর্মশালায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীসহ প্রায় ১৮০ জন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করেন।  ঊল্লেখ্য যে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর কম সংখ্যক অংশগ্রহণকারীর অংশগ্রহণে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

This post has already been read 4020 times!

Check Also

মহিষের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার

সাভার সংবাদদাতা: মহিষের উৎপাদন বাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, একসময় …