নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জীবনজীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ওপর। দেশে বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে যা ক্রমশ বাড়ছে, প্রতিবছর ২২ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে; অন্যদিকে শিল্পায়ন, নগরায়ন, বাড়ি-ঘর নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরিসহ নানা কারণে চাষের জমি কমছে। এই দুই চ্যালেঞ্জের সাথে যুক্ত হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন। এসব বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা ও শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সেজন্য মাটিকে সজীব রাখতে হবে, মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী শনিবার (৫ ডিসেম্বর) অনলাইনে ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ পালন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনার, শোকেসিং এবং সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু কৃষি নয়, মাছ, প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রির খাদ্যও মাটি থেকে আসে। সেজন্যও মাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া, দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যেয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়ছে কিন্তু মাটির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা, মাটিতে গাছের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মান বজায় রাখতে হবে।
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, দেশে মাটির গুণাগুণ ধরে রাখতে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমি, পাহাড়ি এলাকার সমস্যাক্লিষ্ট জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। যার মাধ্যমে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় দেশে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২০ পালনের জন্য রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সহযোগিতা করেছে মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, সয়েল সাইন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘মাটিকে সজীব রাখুন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন (keep soil alive, protect soil biodiversity).
এফএও’র হিসাব মতে, পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের এক চতুর্থাংশের আবাসস্থল হচ্ছে মাটি। সুস্থ মাটির একটি অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে মাটির জীববৈচিত্র্য। এ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে পারলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, আর মাটি সুস্থ থাকলেই কেবল নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। কিন্তু বর্তমানে মাটির এ জীববৈচিত্র্য ক্ষতির সম্মুখীন যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা না থাকা। পরে কৃষিমন্ত্রী ‘সয়েল মিউজিয়াম সফটওয়্যার’ উদ্বোধন ও ‘ ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডারের সভাপতিত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দিনের দ্বিতীয়/টেকনিক্যাল সেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে ‘ সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ বছর সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কৃষকপর্যায়ে আমচাষি মো: মতিউর রহমান, শিক্ষাবিদ হিসাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিভাগের অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম, এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ড. জেড. করিম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)’ মাটির গুণাগুণ রক্ষার্থে কৃষকের জমির মাটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম মাত্রার সার ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের জন্য সেবা প্রদান করে আসছে। এছাড়া, গবেষণার মাধ্যমে লবণাক্ত ও পাহাড়ি এলাকার মৃত্তিকায় ফসল উৎপাদনের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। এই প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখছে প্রযুক্তিগুলো ।