বুধবার , ফেব্রুয়ারি ৫ ২০২৫

আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : গত বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে খুলনাঞ্চলে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এবার চিত্র বিপরীত। বাম্পার ফলন হয়েছে আমনের। এখন চলছে ধান ঘরে তোলার পালা।  ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন কৃষক। ফসল উঠানে তুলতে এখন ব্যস্ত তারা। ফলে কৃষকের মুখে শোভা পাচ্ছে হাসি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে আমন ধানের চাহিদা আছে, দামও ভালো রয়েছে। এবার চাষিরা নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন।

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের কৃষক মো. ইয়াসিন মোল্যা বলেন, ধানের ছড়ায় মাঠ ভরে গেছে। সোনারঙের মাঠভর্তি ধানখেত দেখে প্রাণটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দাকোপ বটিয়াঘাটা উপজেলার কয়েকটি ধান ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই কৃষক ছুটছেন জমিতে। কাস্তে হাতে নেমে পড়ছেন ধানখেতে। ধান কেটে আঁটি বেঁধে রাখছেন খেতের মাঝেই। বিকেল থেকেই সেই আঁটি বোঝা বেধেঁ মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে পুরুষের পাশাপাশি নারী কৃষকরাও সমানতালে কাজ করছেন।

বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত ফুলতলা গ্রামের কৃষক হাফিজ মৌলঙ্গী বলেন, চারবিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে হাজার ৫০০ টাকার মতো। ধান ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৭ থেকে ১৮ মণ করে ধান পাবো বলে আশা করছি। পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের কৃষক শেখ রবিউল ইসলাম বলেন, বিঘা জমিতে বিআর২৩ ব্রি৪৯ জাতের ধান চাষ করেছিলাম।  ধানের ফলন বেশ ভালো।  স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য বছরের তুলনায় বছর আমনের ফলন অনেকটাই ভালো। যদিও ভরা মৌসুমে নদীতে মিষ্টিপানি দেরিতে আসার কারণে আমনের বীজতলা তৈরিতে বিলম্ব হয়। তবে সেচ বৃষ্টির পানি দিয়ে চাষিরা বীজতলা তৈরি করেন। এরপরে কোনো সমস্যা দেখা গেলে তারা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ হেক্টর বেশি।  গত বছর অর্জিত হয়েছিল ৬৪০ হেক্টর।  এবার বিআর২৩, ১০, ১১, বিনা১৯, ০৭, ব্রি৩০, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৭২, ৭৩, ৭৬, ৭৭, ৮৬ ৮৮ সহ স্থানীয় কিছু উচ্চমূল্য জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, সবচেয়ে বেশি দাকোপে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। গেলবারের তুলনায় এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যেই কৃষকেরা ১০ শতাংশ জমির ধান কেটে ফেলেছেন।  দ্রুতই সব খেতের ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন তিনি। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বছর ডুমুরিয়ায় ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ধান খেত থেকে কেটে ঘরে তুলেছে কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এজন্য জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই কৃষকরা সব ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

This post has already been read 3651 times!

Check Also

সিলেট অঞ্চলে বীজের মান উন্নয়নে এসসিএ এবং অংশীজনের ভূমিকা শীর্ষক ‘সেমিনার’

সিলেট সংবাদদাতা: আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন অফিস, সিলেট অঞ্চল, সিলেট কর্তৃক আয়েজিত বীজের মান উন্নয়নে এসসিএ …