ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনায় চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৯টি । এর মধ্যে ২৩টি বর্তমানে চালু রয়েছে। করোনার কারণে চালুকৃত এসব প্রতিষ্ঠান চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বহির্বিশ্বে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া ভারত, ইকুয়েডর ও ভিয়েতনামে ভেনামি জাতের চিংড়ির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। ভেনামি চাষে উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হয়।
দেশের বাজারে উৎপাদন কমা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারাসহ নানা কারণে সংকটে দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য চিংড়ি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক চিংড়ি চাষি থেকে শুরু করে চিংড়ির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা না পেলে সর্বশান্ত হয়ে পড়বেন এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা। হারিয়ে যাবে চিংড়ি শিল্প। করোনার প্রভাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ লাখ চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় দেশের সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয়। ঘের মালিকরা তাদের চাষকৃত চিংড়ি আড়ৎগুলোতে সরবরাহ করেন। আর হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মৎস্য আড়তদারদের কাছ থেকে বাগদা অথবা গলদা চিংড়ি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সেটি বিদেশে রফতানি করে থাকে। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আড়ৎগুলো থেকে চিংড়ি সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়। এরফলে পাইকারি বাজারে মাছের দরপতন হয়। সেই প্রভাব গিয়ে পড়ে ঘের ব্যবসায়ীদের ওপর।
হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, হিমায়িত চিংড়ি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত। দেশের সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর জেলাতে। দেশের রফতানি বাজারে অন্যতম সম্ভাবনাময় এ খাত চলমান করোনায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। করোনার কারণে সব সেক্টরের সাথে চিংড়ি সেক্টরও হুমকির মুখে পড়েছে। করোনার কারণে চিংড়ি শিল্পে ধস নেমে এসেছে। অনেক দেশ চুক্তি বাতিল করেছে। হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চিংড়ির প্রধান ক্রেতা আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর এসব আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বহু ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। তারা জানান, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম কমেছে। বিভিন্ন মাছ কোম্পানির প্রায় ৩০০টির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হয়েছে। ফলে ওই মাছগুলো হ্যান্ডওভার করা সম্ভব হয়নি।
বিগত বছরগুলোতে এ অঞ্চলের সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, চীন, ইতালি, মরিশাস, ইউএই, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, সাইপ্রাস ও ডেমোনিকান রিপাবলিকে রফতানিতে সাফল্য এলেও করোনার কারণে শিপমেন্ট না হওয়ায় চিংড়ির বাজার হাতছাড়া হত যাচ্ছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, করোনায় তাদের সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। এ শিল্পের অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।