ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): শীতের তীব্রতার মধ্যেই এখন পর্যটকরা ছুটছেন সুন্দরবনে। করোনা মহামারিতে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর পহেলা নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সুন্দরবন। এরইমধ্যে পশ্চিম সুন্দরবন খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন সাত হাজার পর্যটক। বনবিভাগ বলছে, দীর্ঘদিন ঘরে বন্ধ থাকার পর বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েই পর্যটকরা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটছেন সুন্দরবনে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটকের সংখ্যা কমেছে, কমবে রাজস্ব আদায়ও।
খুলনা বিভাগীয় বন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পশ্চিম সুন্দরবন খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল পরিদর্শন করেছে ৬৫ হাজার ১৪২ জন পর্যটক। এরমধ্যে বিদেশী পর্যটক ছিলেন ৪৪৩ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ টাকা। কোভিডের কারণে চলতি বছরের ২৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ করা হয়।
চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ৬৫ হাজার ৭৭ জন পর্যটক। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৮১০ টাকা। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে দেশী পর্যটক ছিল দুই হাজার ৬৫৬ জন, বিদেশী ৮৮ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাত লাখ ৪২ হাজার ৩৯৫ টাকা। সে হিসেবে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে পর্যটকের সংখ্যা ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
সাম্প্রতিক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন শ্যামনগরের নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বুলবুল। তিনি বলেন, টানা সাত মাস বন্ধ থাকায় প্রকৃতি যেন সেখানে সেজেছে নতুনরুপে। তাছাড়া অনেকদিন পর বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটছেন সুন্দরবনে। শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওসমান গণি জানান, যৌবন ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন। দীর্ঘদিন বর্জ্য না ফেলায় পরিবেশ দূষণও কমেছে সেখানে।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল জানান, পর্যটকদের নিয়ে ভ্রমণের জন্য এখানে ২৫০টি ট্রলার রয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও পর্যটকদের সংখ্যা খুবই কম। সপ্তাহে একটিও ভাড়া পাচ্ছেন না ট্রলার মালিকরা। প্রায় পাঁচটি পরিবারের জীবিকা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ও বর্তমানে পর্যটক না থাকায় এসব ট্রলার মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছ।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কলাগাছি ও দোবেকী দুইটি পয়েন্ট দিয়েই বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে পর্যটকরা। সুন্দরবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহাম্মদ মহসিন জানান, গত বছরে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। তবে গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিলো । সম্প্রতি সরকার সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় সুন্দরবন কেন্দ্রীক নির্ভরশীলদের আয় বৃদ্ধিও সাথে সরকারের রাজস্ব আয় বারবে। শীতের আবহ উপেক্ষা করে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ পূর্বক পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন।