নিজস্ব প্রতিবেদক: সোনালী আঁশখ্যাত পাটের বীজের সিংহভাগ ভারত থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। দেশে বছরে কৃষক পর্যায়ে/প্রত্যায়িত বীজের চাহিদা হলো ৫ হাজার ২শ’ ১৫ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সরবরাহ করে ৭শ’ ৭৫ মেট্রিক টন (তোষা পাট- ৫১৫ টন; দেশি- ২৬০ টন)। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আনতে হয়। তাই অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়ে এবার বাংলাদেশ। এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি।
কৃষিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম,এনডিসি, সংস্থাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮,৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষিসচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমরা পাটবীজের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না। আমরা পাটবীজের উৎপাদন বাড়াব। পাটের উৎপাদন বাড়াব। পাট চাষকে এদেশের চাষিদের নিকট লাভজনক ফসলে উন্নীত করব। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আবার ফিরেয়ে আনব।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে। সেই জিনোম ব্যবহার করে আমাদের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল পাটবীজ রবি-১ জাত উদ্ভাবন করেছে; যার ফলন ভারতের পাটজাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। কৃষক পর্যায়ে এটির চাষ বাড়াতে পারলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, দেশে পাটবীজ উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো অন্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা চাষ করতে চায় না। পাটবীজে কৃষকদের আগ্রহী করতে ও কৃষকেরা যাতে চাষ করে লাভবান হয় সেজন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকলে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। তার সাথে পাটবীজ রপ্তানির উপর সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ভয়ও থাকে।
অথচ, জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত পাটের জাত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, পাটআঁশ এবং পাটবীজ ফসল দুইটি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগষ্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগষ্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমুল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী নন। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে পাট চাষের সময় কৃষক বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে পাট চাষ করা লাভজনক বলে মনে করে। দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে দেশি পাট ১৫ ভাগ ও তোষা পাট ৮৫ ভাগ উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ ভারত থেকে আমদানিকৃত জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়।