বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ১৪ ২০২৪

আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ও টক আমগাছকে মিষ্টি গাছে রূপান্তরকরণ

কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল : আম হলো বাংলাদেশে ফলের রাজা এবং গাছ হলো জাতীয় গাছ। আম সাধারণত উষ্ণ ও অবউষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্বার্থকভাবে জন্মে। ইন্দো-র্বামা অঞ্চলে আমের উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হয়, তবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহামহাদেশে আম সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। কারণ- আমের বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, পুষ্টিমান ও স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। বাংলাদেশে প্রায় সব অঞ্চলে আম জন্মে কিন্তু দেশের উরাঞ্চলে এর বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। সাধারণত দুই প্রকারের সমস্যার কারণে আম চাষিরা প্রতি বছর অনেক ক্ষতির শিকার হয়ে থাকেন। এগুলো হচ্ছে- (১) প্রাকৃতিক কারণ (যেমন- ঝড়, শিলাবৃষ্টি, খরা প্রভৃতি) এবং (২) রোগ ও পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত। সঠিক পরিচর্যা ও রোগ-পোকামাকড় দমন করে প্রথম ক্ষতি আংশিক এবং দ্বিতীয় ক্ষতি প্রায় সম্পূর্ণরুপে সমাধান করা সম্ভব। আম গাছের ফল ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ফলন বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পরিচর্যাগুলো করা একান্ত প্রয়োজন:

পরগাছা দমন

আমগাছে একাধিক জাতের আগাছা জন্মাতে দেখা যায় যা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পরগাছাসমূহে শেঁকড়ের মতো এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া হয় যা গাছের মধ্যে প্রবেশ করে রস শোষন করে খায় এবং গাছেকে দুর্বল করে ফেলে। পরগাছার প্রাদুর্ভাব বেশি হলে গাছের পাতার আকার ছোট ও ফ্যাকাসে হয় এবং অনেক সময় গাছ মারা যায়। এর ফলে গাছের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। তাই ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই পরগাছা অপসারন করতে হবে।

সার প্রয়োগ

গাছের বৃদ্ধি ও ফল উৎপাদনের জন্য সারের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। ফলন্ত গাছের আকার, বয়স ও মাটির উর্বরতার ওপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। দুপুর বেলা যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে সেটুকু স্থানে মাটি কুপিয়ে সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ

সাধারণত জমির উপরের স্তরে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে যা সার হিসেবে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। তাই আম বাগানের উপরের ২-৩ মিটার অংশকে জমির পানি সংরক্ষণ স্তর হিসেবে ধরা হয়। তাই শুস্ক মৌসুমে আম বাগানে পানি সেচ দেয়া দরকার। আমের গুটি মটর দানার মতো হওয়ার পর থেকে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ বার সেচ দিলে আমের গুটি ঝরা বন্ধ হয়।

টক আমগাছকে মিষ্টি গাছে রূপান্তরকরণ

বাগানের কোন গাছের আমের গুনাগুন খারাপ হলে সে গাছকে নষ্ট না করে ভিনিয়ার কলমের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করা য়ায়। বয়স্ক গাছের ২-৩ টি ডাল কেটে দিলে সেখান থেকে ন’তন শাখা বের হলে তার পর নতুন শাখাতে ভিনিয়ার কলম করে নিতে হবে। এভাবে ৩-৪ বারে কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

পুরাতন বাগান নবায়ণ

আম বাগানের বয়স বেশি হলে ফল ধারণ কমে যায়। এক্ষেত্রে গাছ কেটে না ফেলে পুরাতন গাছের ভারী শাখা কেটে দিলে সেখানে নতুন শাখা বের হবে এবং গাছ নবায়ণ হয়ে যাবে। এভাবে ২-৩ বছরে বাগান নবায়ণ করা যায়।

ফসল সংগ্রহ

ফল ধরার ৩-৫ মাসের মধ্যেই জাতভেদে ফল পাকা শুরু করে। বাণিজ্যিকভাবে কখনো সম্পূর্ণ পাকা আম গাছ থেকে পাড়া ঠিক নয়। গাছের ফল দুই চারটি পাকা শুরু করলে বাঁশের কোটার মাথায় থলে সদৃশ্য জালতি লাগিয়ে আম পাড়তে হবে যেন আঘাত না লাগে। গাছের নিচে সাময়িকভাবে রাখতে হলে খড় বিছিয়ে তার উপর রাখতে হবে। নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখে ফল সংগ্রহ করতে হবে-

(১) আমের বোটার নীচে হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। (২) পানিতে দিলে ডুবে যাবে। (৩) কস বের হলে দ্রুত শুকিয়ে যাবে। (৪) দুই একটি পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়বে।

ফল সংরক্ষণ

আম পচনশীল ফল। বেশি পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করলে সংরক্ষণকাল কম হয়। অধিকাংশ জাতের আম ১৩-১৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় ও ৮৫-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় বাঁশের ঝুড়ি, বাস্কেট, খড় বিছানো প্রভৃতিতে স্থানে  ৪-৭ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়।

This post has already been read 6007 times!

Check Also

জলঢাকায় সোনালী ধানের শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

বিধান চন্দ্র রায় (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই সবুজের সমারোহ। …