নীলফামারী: দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে নেটহাউসে আলুর বিভিন্ন বয়সী সবুজ, সতেজ চারা। কোনটি আবার বুক সমান উঁচু, ফুলে ভরা। থোকা থোকা আলু ঝুলে আছে গাছে। এর মধ্যে রয়েছে বারি উদ্ভাবিত মিউজিকা, সাগিতা, জার্মানি থেকে আনা আগামজাত সানসাইন, প্রাডা, কুইন এ্যানি, ডোনাটা, সানতানা, লাবেলাসহ অনেক জাত। আগামজাতের, শুষ্ক উপাদান কম, উচ্চফলনশীল, রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী এরকম আলুর ও আলুবীজের চাষ হচ্ছছে বিএডিসির ডোমার বীজআলু উৎপাদন খামারে। এ খামারে মোট জমির পরিমাণ ৫১৬ একর। আলু চাষের উপযোগী ৩১০ একর। চলতি ২০২০-২১ উৎপাদন বর্ষে ২৫৬ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বুধবার নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় অবস্থিত এ খামার পরিদর্শনে করেন। পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে বছরে ১ কোটি টনের বেশি উন্নত জাতের আলু উৎপাদন হয়। দেশে চাহিদা রয়েছে ৬০-৭০ লাখ টনের মতো। দেশে উৎপাদিত আলুতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিদেশে চাহিদা কম। সেজন্য বিদেশে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলুর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে উচ্চফলনশীল, শুষ্কপদার্থের উপস্থিত কমসম্পন্ন রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য এসব আলুর জাত চাষের ফলে আলু রপ্তানির অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আলুর বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, একই পরিমাণ জমি থেকে দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ আলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এছাড়া, কৃষিমন্ত্রী এদিন রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলুর প্লট, আলু ফসলের মিউজিয়াম, ড্রাগন ও খেজুর বাগান প্রভৃতি পরিদর্শন করেন।
এ সময় কৃষিসচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো: সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, ব্রির মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বারির মহাপরিচালক নাজিরুল ইসলাম, গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচাল ড. মো: এছরাইল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিএডিসির ‘মান সম্পন্ন বীজআলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এই ডোমার খামারে ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন জাতের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য ট্রায়াল প্লট স্থাপন ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২৮টি জোনে চুক্তিবদ্ধ চাষি’র মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ব্যবহৃত/প্রত্যায়িত বীজআলু উৎপাদন করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের আওতায় উচ্চ ফলনশীল, রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর জাত পরিচিতি ও জনপ্রিয়করণের জন্য বিএডিসি আমদানিকৃত এবং বারি উদ্ভাবিত সম্ভামনাময় ২০টি জাত নিয়ে এ বছর সারাদেশে ৩০০টি প্রদর্শনী প্লট ও মাল্টিলোকেশন টেস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২০-২১ উৎপাদন বর্ষে বিভিন্ন মানের ৩৭ হাজার ৫০০ মে.টন বীজআলু এবং ৫ হাজার মে.টন রপ্তানি উপযোগী আলুসহ সর্বমোট ৪২ হাজার ৫০০ মে.টন আলু উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বীজআলুর বীজ মান অক্ষুন্ন রাখার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বীজআলু উৎপাদন, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের নিমিত্ত আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন বীজআলু প্লান্টার, গ্রেডার, ড্রায়ার ইত্যাদি যন্ত্রের মাধ্যমে কার্যক্রম এ খামারে শুরু হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ চাষি, বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী ও ডিলারগণকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীজআলুর উৎপাদন ও বিপণনে জ্ঞান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
আলুবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে ২৮টি জোনের ৩০টি হিমাগার রয়েছে যার বর্তমান ধারণক্ষমতা মোট ৪৫ হাজার ৫০০ মে.টন। এই প্রকল্পের মেয়াদে ২ হাজার মে.টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি হিমাগার নির্মাণ করা হবে। ফলে বিএডিসি’র বীজআলুর সংরক্ষণ ক্ষমতা উন্নীত হবে ৫৩ হাজার ৫০০ মে.টনে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে বীজআলু উৎপাদন ৬০ হাজার মে.টনে উন্নীত করা হবে।
বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ন সম্ভামনাময় খাদ্য ফসল। একক ফসল ও আয়তনের দিক দিয়ে আলুর ফলন ধান ও গমের চেয়ে প্রায় ৪ (চার) গুণ বেশি। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১ কোটি মে.টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়।