ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাস করে ভারত থেকে আমদানির সুযোগ করে দেওয়ায় চালের বাজারের উর্ধগতি থেমে সামান্য কমেছে। তবে এখনও রয়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এদিকে গত সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানি করা চাল খুলনার পাইকারি বাজারে পৌছালেও অধিকাংশ বিক্রেতারা কৌশলগত কারণে বিক্রি করছে না আমদানীকৃত চাল। বাজারে দেশি চাল প্রচুর পরিমাণ স্টক থাকায় দাম কমের আর্থিক ক্ষতির আশংকায় ভারতের চাল বিক্রি থেকে পাইকারী বিক্রেতারা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখছেন ।
খুলনার পাইকারি আড়ত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি দেশি মিনিকেট ৫০/৫১, আঠাশ বালাম ৪৫/৪৬ ও স্বর্ণা ৪০/৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় মিনিকেট ৫৫/৫৬, বালাম ৪৬/৪৭ ও স্বর্ণা (মোটা) ৪০/৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে ভারতীয় চালের মধ্যে স্বর্ণা ছাড়া অন্যগুলোর সরবরাহ তেমন নাই বলে জানা যায়।
মহানগরীর বড় বাজারস্থ দৌলতপুর ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী রনি বলেন, চালের দাম নেমে যেতে পারে এই জন্য বাজারে ক্রেতারা খুব কম পরিমানে চাল কিনছেন। ভারতীয় চাল খুলনা পৌছালেও আমাদের ঘরে এখনও উঠানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পাইকারি বিক্রেতা জানান, ভারতীয় চাল বাজারে আসছে এক সপ্তাহ আগে। তবে স্টকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি চাল থাকায় ভারতীয় চাল কেউ ঘরে তুলতে চাচ্ছে না। আর ভারতীয় চালের দামও বেশি রাখা হচ্ছে।
দেশের চাল উৎপাদন ও চালের দামের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৫০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। তারপরও দাম বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যনুযায়ী, এক দশক আগে (২০১০-১১ অর্থবছর) প্রতি কেজি (মাঝারি মানের) চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা বর্তমান বাজারে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে । গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতি কেজি চালের গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। এরপর হঠাৎ করেই পরের বছর চালের দাম ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমেছিল। কিন্তু এরপর আবার চালের দাম লাগাম ছাড়া হয়। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এ নিত্যপ্রয়োজনীয় চালের দাম। তথ্য বলছে, পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে চালের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৩ টাকা, ৫৫ টাকা, ৫৭ টাকা ও ৫৬ টাকা।
অন্যদিকে কৃষি অধিদফতরের তথ্য বলছে, এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতি বছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে। তারপরও ভোক্তা পর্যায়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চাল আমদানি শুরুর আগে দ্রুত একটি জরিপ করে দেখা উচিত, দেশে চালের উৎপাদন কেমন হয়েছে, আদৌ চাল আমদানি করা দরকার কি না। সে ধরনের কোনো মূল্যায়ন ছাড়া আমদানিতে চলে গেলে তা এই করোনা সংকটের সময়ে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাবে। আর দেশের ভেতর থেকে চাল কিনলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে।