নিজস্ব প্রতিবদেক: বর্তমানে বাংলাদেশে মুরগি পালন একটি লাভজনক পেশা হিসাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিগত ৫ বছরে এ শিল্প ১০% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বিশেষ করে মহিলা ও বেকার যুবক পোল্ট্রি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এবং সারা দেশে প্রায় ১ লাখের বেশি ছোট ও বড় বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে। পোল্ট্রি একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিগণিত হলেও এ ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন খামারী ও উদ্যোক্তাদের যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা। পোল্ট্রি শিল্পের সঠিক বিকাশের লক্ষ্যে এসিআই এনিম্যাল হেলথ ছোট ও মাঝারি পোল্ট্রি খামারীদের পোল্ট্রি বিষয়ক কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। কেননা খামারিদের এ বিষয়ে শিখার সুযোগ কম। তাই দেশের খ্যাতিমান পোলট্রি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আ. ছালেক (চীফ টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার, এসিআই এনিম্যাল হেলথ ) রচিত ‘ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা’ নামক বইটি বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) -এর মাধ্যমে সারাদেশের পোলট্রি উদ্যোক্তা ও খামারিদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালীতে একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসিআই পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমানের হাতে ‘ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা’ নামক বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন এসিআই এগ্রিবিজনেস -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. এফএইচ আনসারী। মূলত এসিআই লিমিটেড উক্ত বইটি বিপিআইসিসিকে ৪ হাজার কপি প্রদান করে যাতে এগুলো দেশের প্রান্তিক পোলট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছে যায়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিডারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ব্যাব) সভাপতি রাকিবুর রহমান (টুটুল), রেনাটা এনিম্যাল হেলথ্ পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, পোলট্রি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এসিআই এনিম্যাল হেলথ্ -এর উপ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন শাহ্, চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজার ডা. মো. আ ছালেক, পরিচালক (সেলস) ডা. মো. আমজাদ হোসেন, হেড অব মার্কেটিং ডা. হুমায়ুন আরেফিন, বিজনেস ম্যানেজার ডা. মঈনুল ইসলাম, মার্কেটিং ম্যানেজার ডা. মো. নেজাম উদ্দিন আখন্দ (রনি) সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে এসিআই এনিম্যাল হেলথ্ -এর উপ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহীন শাহ্ বলেন, আমরা জানি জ্ঞানই শক্তি। কিন্তু এই জ্ঞানটিকে যদি ছড়িয়ে দেয়া না যায় তবে সমাজ ও রাষ্ট্র কোনভাবেই উপকৃত হবে না। ঠিক তেমনি সঠিক পোলট্রি খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জ্ঞান যদি আমাদের উদ্যোক্তা ও খামারিদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে না পারি তবে এই বইটিরও কোন স্বার্থকতা থাকবে না। বিপিআইসিসি’কে ধন্যবাদ তাদের মাধ্যমে বইটি ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য।
অনুষ্ঠানে ড. এফএইচ আনসারী আনসারী বলেন, পোলট্রি শিল্পের হিসেবে প্রদানকৃত বইটি হয়তো খুব সামান্য কিন্তু এটার প্রভাব অনেক বড়। কারণ, আমাদের পোলট্রি খামারিরা বইটি পড়ে যখন খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরণ করবেন তখন তারা ভালোভাবে খামার পরিচালনা করতে পারবেন, গুণগত মানের ব্রয়লার উৎপাদন করতে পারবেন, খামার পরিচালনার আনুষঙ্গিক অপচয় রোধ হবে এবং সর্বোপরি আমাদের দেশে কোয়ালিটিসম্পন্ন পোলট্রি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। কারণ, পোলট্রি একটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবসা যেটিতে জানার কোন বিকল্প নেই। এ সময় প্রান্তিক খামারিদের মাঝে বইটি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার জন্য বিপিআইসিসি’কে ধন্যবাদ জানান ড. আনসারী।
বইটির লেখক ডা. মো. আ. ছালেক বলেন, আমাদের দেশে যারা ব্রয়লার মুরগি পালন করেন দেখা যায় বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। কিন্তু তারা সঠিক সমাধান পান না। এ চিন্তা থেকেই এবং ড. আনসারীর পরামর্শে ব্রয়লার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যুগোপযোগী একটি বই লেখার চেষ্টা করেছি। আশা করি, খামারিগণ বইটি থেকে উপকৃত হবেন। কারণ, বইটি ব্রয়লার পালনের জন্য একটি কম্পিলিট সলিউশন। এ সময় বইটির বিভিন্ন অধ্যায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন লেখক।
বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, আগামী মাস থেকেই পর্যায়ক্রমে সারাদেশের খামারি, হ্যাচারি, ব্রিডার ফার্ম এবং ফিডমিল সংশ্লিষ্টদের জন্য পোলট্রি বিষয়ক কর্মশালা শুরু করবো। নিরাপদ পোলট্রি মাংস ও ডিমের ব্যাপারে ভোক্তাদের আশ্বস্ত করার জন্যও আমরা কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সারাদেশে খামারিদের ওইসব প্রোগ্রামের মাধ্যমেই বইটি যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া হবে। বিপিআইসিসি’র মাধ্যমে সারাদেশের খামারিদের জন্য বইটি বিনামূল্যে প্রদানের জন্য এসিআই পরিবারের প্রতি এ সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যাব সভাপতি রাকিবুর রহমান (টুটুল) বলেন, গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেকটি খামারি যেন বইটি পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আবার খামারিরা যেন বইটি উৎসাহ নিয়ে পড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করি, খামারিরা বইটি পাবে এবং পড়ে উপকৃত হবেন। এ সময় নাহার এগ্রো’র পক্ষ থেকে ১ হাজার কপি ‘ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা’ নামক বইটি কিনে নেয়ার ঘোষণা দেন টুটুল।
এসিআই এনিম্যাল হেলথ অন্যান্য কৃষি ব্যবস্থাপনাসহ পোল্ট্রি, লাইভস্টক এবং ফিশারিজ শিল্প বিকাশে গুণগত পণ্য ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। আমাদের দেশে ব্রয়লার মুরগির চাহিদার মূল কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বৃদ্ধি এবং মুরগির মাংসের তুলনামুলকভাবে কম মূল্য। এর ফলে বর্তমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পোল্ট্রি ব্যবসায় যোগ দিচ্ছেন নতুন উদ্যোক্তারা। অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরাতন খামারের আকার। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন প্রতিকূলতা ও রোগব্যাধি এবং সেই সাথে উন্নততর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ডা. মো. আ. ছালেক যুগোপযোগী ও ব্যবহার ভিত্তিক ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা বইটি লিখেছেন এবং এসিআই এনিম্যাল হেলথ এ বইটি প্রকাশের জন্য স্পন্সর করেছে। বইটিতে খামার ব্যবস্থাপনার জন্য কারিগরি ও ব্যবসাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য এবং খামার ব্যবস্থাপনা ফরম সংযোজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। উক্ত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান এসিআই এগ্রিবিজনেস -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. এফএইচ আনসারীকে উক্ত বইটি বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেন। তারই প্রেক্ষিতে আজ এসিআই লিমিটেড বিপিআইসিসিকে ৪ হাজার ‘ব্রয়লার মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা’ নামক বইটি সরবরাহ করেছে। এই বইটি ব্যবহার করে পোল্ট্রি খামারীরা এবং উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন বলে সংশ্লিষ্ট সকলেই মতামত প্রকাশ করেন।
সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন এসিআই এনিম্যাল হেলথ্ –এর হেড অব মার্কেটিং ডা. হুমায়ুন আরেফিন।