বৃহস্পতিবার , ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪

হরদম বাণিজ্য: জৈব মানেই কি অর্গানিক?

প্রতীকি ছবি।

নাহিনূর রহমান: অর্গানিক (Organic) শব্দটার আভিধানিক বাংলা অর্থ জৈব। কিন্ত  যখন আমরা এটি বহুল প্রচলিতভাবে ব্যাবসায়িক অনুক্রমে ব্যাবহার  করবো তখন কিন্ত জৈব মানেই অর্গানিক (Organic) হবে না। বিংশ শতাব্দীতে বহুল প্রচলিত একটি ব্যবসায়িক শব্দ এটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জৈব কৃষিকে চালিয়ে যাচ্ছে অর্গানিক নামে। শুধু তাই নয়, কেউ কেউতো অর্গানিকের বালাই না থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে বসেছে অর্গানিক! এতে ভোক্তারা শুধু ঠকছেন তা নয়, একইসঙ্গে হচ্ছে প্রতারিত।

আমরা ভাবি কোন কিছু প্রাকৃতিক ভাবে  হলেই বা সার বিষ ছাড়া হলেই তা অর্গানিক, আসলে কিন্ত  তা নয়। হ্যা  সেটা নিরাপদ কিন্ত  যখনই আমরা একটা পণ্য কে organicবলে  বাজারে বিশেষ করে বিশ্ব বাজারে উত্থাপন করবো তখন অবশ্যই তা একটা নিয়ম নীতিমালা মেনে এবং নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বলতে হবে।

আমাদের দেশে বর্তমান সরকার আধুনিক নানা বিষয়ের সাথে নিরাপদ খাদ্য নিয়েও যথেষ্ট পরিমান কাজ করে চলছে যার ফলশ্রুতিতে গঠিত হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

ধরুন, আপনি অর্গানিক চাল উৎপাদন করতে চান। তাহলে আপনাকে প্রথমে খুজে বের করতে হবে ভার্জিন ল্যান্ড যেখানে কৃষির ছোয়া লাগেনি, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এটা বাংলাদেশে দুঃসাধ্য বটে, তাহলে উপায়।

হ্যা উপায় আছে, আপনার প্রথমেই যেটা করতে হবে লম্বা একটা স্বপ্ন দেখতে হবে।কমপক্ষে দশবছরের জন্য।

আপনার জমির মাটিটা আগেই পরীক্ষা করে নিতে পারেন, মাটির প্রাণের বর্তমান কি অবস্থা তার একটা অনুমান পেয়ে যাবেন। এবার আসুন মাটিতে জৈব রাসায়নিক এর পরিমান কতটুকু আছে সেটা নিয়ে ভাবতে বসি।কারণ organic এর প্রাণ হবে আপনার মাটির স্বাস্থ্য।

শুরুতেই চেষ্টা করুণ মাটিকে বিশ্রাম দিতে। মাটিতে লাগিয়ে দিতে পারেন কাসাভা কিংবা রেড়ি বা ধইন্চার মতো লিগুমিনাস উদ্ভিদ যা আপনার মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বাড়াবে।

আপনার প্ল্যানে এবার যুক্ত করুন জমির জন্য কম্পোস্ট উৎপাদন প্রক্রিয়া। গরু সংগ্রহ করুণ, তার আগে গরুর জন্য নির্দিষ্ট জমিতে ঘাস লাগান, সেই ঘাসে কোন প্রকার রাসায়নিক দিতে পারবেন না। আপাতত বাইরের সোর্স থেকে যে গোবরটা আনাবেন সেটা পিট আকারে চল্লিশ দিন সংরক্ষণ করুণ তারপর তা জমিতে ছিটিয়ে দিন।

ও আচ্ছা, এই ফাকে বলে রাখি যা যা করছেন তার সব কিন্তু লগবুকে থাকতে হবে। গোবর পচতে থাকুক, তারপর ঘাস জন্মাতে থাকুক তার মাঝে আমরা একটু ঘুরে আসি দেশে কি হচ্ছে তা জানতে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত Organic certificate প্রদান করার মত অথরিটি তৈরি হয়নি। তবে আশার বাণী হলো, ভিশন-২০২১ অনুযায়ী সরকার এ ব্যাপারে এগিয়ে যাচ্ছে দৃপ্ত পায়ে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে BOAN বাংলাদেশ অর্গানিক এগ্রিকালচার নেটওয়ার্ক যা ORGANIC এগ্রিকালচার প্রযুক্তিকে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ও ভবিষ্যতে সার্টিফিকেশনের জন্য কাজ করবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিচ্ছে ফাইটোসেনেটারী সার্টিফিকেট ও নিরাপদ কৃষি প্রযুক্তি, এটা কিন্ত অর্গানিক প্রত্যয়ণ নয়। এসব কিছুই  ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের পদক্ষেপ।

বাংলাদেশে এখন অর্গানিক কৃষি বিষয়ক বিপণনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট। ১৯৯৯ সনে কাজ শুরু করে তারা ২০১৪ সনে অর্জন করেছে জার্মানির LACON এর অনুমোদন। তারপর  একে একে এসেছে SGS, RAINFOREST, FAIRTRADE, JAS, সহ নানা  প্রতিষ্ঠান। প্রায় তের বছরের পথ পরিক্রমা। এই পথ হেটে এখন  তারা USFDA কর্তৃক  অনুমোদিত অর্গানিক চা বাগান, এই চা আমেরিকাতে বিক্রি হয় TEATULIA নামে। উত্তর বঙ্গের চা আজ বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত নিজ নামে।

(চলবে……………………………)

লেখক: অণুজীববিদ, পরামর্শক- অর্গানিক এগ্রিকালচার।

This post has already been read 4654 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …