রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নৈকাটি এলাকায় ভাঙ্গন কবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। বেডিবাঁধ ভাঙ্গন কবলিত অংশে ডাম্পিংসহ প্লেসিংয়ের কাজে কার্যাদেশ অনুযায়ী বালু ভর্তি পর্যাপ্ত বস্তা ব্যবহার না করার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের । এছাড়া মার্কিং না করা এবং জিও বস্তাগুলোতে বালু কম দেয়া ছাড়াও ঠিকাদারের পরিবর্তে সাব-ঠিকাদার ও শ্রমিক সর্দার দিয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। তবে সংস্কারকৃত অংশের প্রাক্কলিত ব্যয়সহ কাজের বিবরণ নিয়ে কোন তথ্য দিতে অপারগতা জানালেও পাউবো’র দাবি কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ চলছে। স্থানীয় রনজিত বর্মন,প্রফুল্ল জোয়ারদার জানান, সাতক্ষীরা পাউবো-১ এর রয়েছে গুটি কয়েক দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী । এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন জ্ঞাত আয়বহিভূত সম্পদের পাড়ার । আমরা ইতিমধ্যে নৈকাটি  ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী গন-স্বাক্ষরিত একটি লিখিত আকারে  দুর্নীতি মামলা দায়েরের জন্য বাঁধ মেরামতের সাথে জরিত সংশ্লিষ্ঠ  পাউবো সেকশন অফিসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা তন্ময় হালদার,  আব্দুল খালেক  মাসুদ রানাও কার্যসহকারীদের মধ্যে রয়েছে  আলমগীর হোসেন,  ওসিউল , নাজিম উদ দৌলা,আশিকউজ্জামান,তুষারের বিরুদ্ধে  দুদক খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবর মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে ।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাধীন বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত নদী কালিন্দী পাড়ের ৫নং পোল্ডারের পরানপুর, নিদয়া ও নৈকাটিসহ বেশ কয়েকটি অংশের বেড়িবাঁধ। শুরুতে কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার কাজ করতে অপারগতা দেখালে নতুনভাবে ঠিকাদার নিয়োগের পর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে সেখানে স্লোব প্রটেকশন এর জন্য ডাম্পিংসহ বস্তা প্লেসিং এর কাজ শুরু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অতিশয় ভাঙ্গন কবলিত নৈকাটি অংশে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে গুণগত মান রক্ষা করা হচ্ছে না। সিন্ডিকেট করে যেনতেন ভাবে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করছে সাব ঠিকাদার নিযুক্ত শ্রমিক সর্দার ও তার লোকজন। আর তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র পক্ষ থেকেও সংস্কার কাজ নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে না। ফলে মারাত্মক ভাঙ্গনমুখে থাকা সীমান্তবর্তী ওই অংশের বাঁধের সংস্কার কাজের গুনগত মান রক্ষা না করার অভিযোগ তুলে বাঁধের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত সংশয় ও শঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা।

সরেজমিন পরিদর্শনে শুক্রবার যেয়ে দেখা যায়, স্থানীয় অধিবাসী পিয়ার মুন্সি নামের এক ব্যক্তি জানান, পাউবো’র কার্যাদেশ অনুযায়ী নৈকাটি অংশের ৮০ মিটার জায়গায় প্লেসিং এর কাজে আট হাজার বেশী বস্তা ব্যবহারের কথা ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে পাউবো’র সাথে মিলে ঠিকাদারের লোকজন সেখানে মাত্র ছয় হাজার বস্তা ব্যবহার করছে। তিনি আরও জানান, বস্তা কম ব্যবহারের কৌশল হিসেবে শুরু থেকে গণনা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে তাতে মার্কিং-ই করা হয়নি।

আজগর আলীসহ নৈকাটি গ্রামের কয়েকজনের দাবি, গণনায় ফাঁকি দেয়ার কৌশল হিসেবে বস্তা গণনার কাজে স্থানীয় কাউকে রাখা হয়নি। তাদের অভিযোগ, পাশের নদীর ভাঙ্গন খাড়াভাবে একেবারে বাঁধের গোড়ায় পৌছে গেছে। এমতাবস্তায় কাজের গুণগত মান রক্ষা না করায় নিকট ভবিষ্যতে সংলগ্ন অংশ আবারও ভাঙ্গনমুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের পরিবর্তে সাব-ঠিকাদার সংস্কার কাজ করলেও কার্য্যক্ষেত্রে কেবলমাত্র শ্রমিক সরদার ও তার লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। সরাসরি ঠিকাদারের পরিবর্তে একাধিক হাত হয়ে শ্রমিক সর্দার কাজ করায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরু থেকে গণনা না করে বস্তা প্লেসিংয়ের মাধ্যমে তারা বড় ধরনের অনিয়ম করেছে বলেও দাবি তাদের।

স্থানীয়রা কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শেষ মুহূর্তে মাত্র ৯৪৬টি বস্তায় মার্কিং করা হয় বলেও জানান তারা। নৈকাটি এলাকার ভাঙ্গন মেরামতের জন্য নিয়ে আসা বস্তা থেকে গত কয়েক দিন পুর্বে প্রায় দুই হাজার বস্তা গভীর রাতে অন্যত্র সরিয়ে নেয় পাউবো’র লোকজন।

মার্কিং না করার সুযোগে বেঁচে যাওয়া ওইসব বস্তা স্থানীয় প্রফুল্ল জোয়ারদারের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে শেষ মুহূর্তে মাত্র ৯৪৬ টি বস্তা গণনাকালে মার্কিং করা হয়। নৈকাটির ভাঙ্গন কবলিত অংশে ডাম্পিংসহ প্লেসিংকৃত বস্তায় মার্কিং না করাসহ অনেক ক্ষেত্রে বস্তায় কম বালু ব্যবহারের অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। একইসাথে ভাঙ্গন প্রবণ ওই এলাকার বাঁধ মেরামতে যথাযথ গুণগত মান রক্ষায় পাউবোসহ ঠিকাদারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তুরিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছে তারা।

শ্যামনগরের নৈকাটি এলাকার বাঁধ সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা সেকশন অফিসার তম্ময় হালদার জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ সরাসরি ঠিকাদারের থেকে কাজ আদায় করছে। পাশের একটি অংশে কাজের বস্তা নৈকাটি এলাকায় থেকে যাওয়ায় সেগুলো সরানো হয়। দিনে কাজের চাপ থাকায় রাতে সেসব বস্তা নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে দেয়া হয়।

এদিকে ‘বস্তা মার্কিং করা মুখ্য বিষয় নয়-দাবি করে পাউবোর ওই কর্মকর্তা জানান, বস্তাগুলো যথাযথভাবে ডাম্পিং ও প্লেসিং হয়েছে কিনা তা জরুরি। বস্তা গণনার কাজে স্থানীয়দের না রাখা হলেও দুই জন প্রতিনিধি তাদের বস্তা গণনা শেষে অনুমতি দিলে শ্রমিকরা সেসব বস্তা প্লেসিং করেছে বলেও দাবি তার।

This post has already been read 3127 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …