শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

বায়োচার -কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা

সমীরন বিশ্বাস : বায়োচার এক ধরনের কয়লা যার মধ্যে ৩৫%-৫৫% কার্বণ থাকে। এই কয়লা এক ধরনের চুলায় (”কৃষি বন্ধু চুলা”) ৩০০-৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বল্প অক্সিজেনের উপস্থিতিতে এবং পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে বায়োমাস পুড়িয়ে বায়োচার তৈরী করা হয়।

“বায়োচার ইনরিচ অর্গানিক ফার্টিলাইজার” বা ”কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” এ সার মাটির খরা, অম্লত্ব ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রন করে মটির স্থায়ী স্বাস্থ্যরক্ষা করে এবং মাটিতে অবস্থিত বিষাক্ত আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, সীসা ইত্যাতি ফসলে ঢুকতে বা আসতে দেয় না। ফলে ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এ সার মাটিতে বসবাসকারী অনুজীবের সংখ্যা শত শত গুন বাড়িয়ে দেয় এবং মাটির পানি ধারন ক্ষমতা ৫ গুন বৃদ্ধি করে। এটি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায়  ৩৫%-৪০%, যার ফলে উৎপাদন করচ কমে আসে। “কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার” ব্যবহারে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন সহজতর হয়।

মান্দায় ও শিবালয় উপজেলায় কৃষি বন্ধু চুলার ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ চুলায় রান্না, পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি উৎপাদিত বায়োচার জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে একবার বায়োচার ব্যবহার করলে শত শত বছর এর কার্যকারিতা থাকে তাই কার্বন সমৃদ্ধ     বায়োচার বা কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারে কৃষকের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জমির স্থায়ী উর্বরতা এবং ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মান্দা ও শিবালয় উপজেলায় প্রায় বার শতাধিক কৃষক ফুলকপি, বাধাকপি, সরিষা, গম, ধান,আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ভুট্টা সহ নানা ফসলি জমিতে  কার্বন সমৃদ্ধ বায়োচার বা কার্বন সমৃদ্ধ  জৈব সার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। প্রকল্পটি আইসিসিও এবং কার্ক ইন এক্টাই এর সহায়তায় সিসিডিবি মাঠ পর্যায়ে ডি.এ.ই.কে সাথে নিয়ে বাস্তবায়ন করছে।

কৃষিবিদরা বলছেন, বায়োচার একবার জমিতে দিলে তা শত শত বছর পর্যন্ত মাটিতে উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম, ফলে বাড়ে মাটির উর্বরতা। তাই রান্নার পাশাপাশি জমির গুনাগুন ধরে রাখতে বায়োচার ব্যবহরের আহ্বান জানালেন কৃষি কর্মকর্তাগণ।

নওগাঁ জেলার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মামছুল ওয়াদুদ বলেন, অধিক হারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব পদার্থ কার্বন দিন দিন কমে যাচ্ছে। ক্রমশ হ্রাস পাওয়া মাটিতে পরপর ”কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারে কার্বন বৃদ্ধি পাবে। এটির ব্যবহারে মাটিতে স্থয়ীত্বশীল স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ফলে কম রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ও কৃষকরা কাংখিত ফলাফল লাভ করবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

ইতিমধ্যে নওগাঁর উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ এবং মানিকগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. শাজাহান আলী বিশ্বাস প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মান্দা ও শিবালয় উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শায়লা শারমিন এবং রিয়াজুর রহমান বলেন, জমিতে আমাদের ৫% পর্যন্ত জৈব পদার্থ থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে আমাদের কিন্তু অনেক কম পরিমাণ মাটিতে জৈব পদার্থ আছে। সেক্ষেত্রে যদি আমরা কৃষি বন্ধু চুলায় উৎপাদিত বায়োচার বা কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করতে পারি, এতে উপজেলাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলায় কৃষকেরা আশা করি উপকৃত হবে।

কৃষি বন্ধু চুলায় কাঠ বা গোবর ও বিভিন্ন ধরনের বায়োমাস বা কৃষি অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে বায়োচার পাওয়া যায় যা কার্বন সমৃদ্ধ। এই কার্বন সমৃদ্ধ বায়োচার জমিতে ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং খরা প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে চাষাবাদ করা যায়। বায়োচার জমিতে ভারী ও বিষাক্ত ধাতুকে (হেভী মেটালকে) নিস্ক্রিয় করে রাখে ফলে উদ্ভিদের শিকড়ের সাহায্যে তা ফসল পর্যন্ত পৌঁছায় না ফলে পাওয়া যায় নিরাপদ ও বিষাক্ত ধাতু মুক্ত ফসল। এই চুলায় ৩৫-৪০% জ্বালানি কম লাগে তাই বনজ সম্পদ রক্ষা পায় ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে, খাদ্য নিরাপত্তায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মত প্রকাশ করেন সশ্লিষ্ট কমর্কর্তাগণ।

This post has already been read 7063 times!

Check Also

আমদানি নির্ভরতা নিরসনে যুগান্তকারী উদ্যোগ: দেশেই তৈরি হবে হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টার

সি‌লেট সংবাদদাতা: দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমদানি নির্ভরতা নিরসনে যুগান্তকারী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ধান …