রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

বিএলআরআই’তে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন

সাভার: স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে হবে। স্বাধীনতা দিবস বহু জায়গায় বহুভাবে অবহেলিত হয়ে কেটে যায়। কিভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে, কি ধরনের অত্যাচার এদেশের মানুষের উপরে হয়েছে, মুক্তিযদ্ধের সময় কি হারে মানুষ মারা গিয়েছে, কিভাবে এদেশের বোনেদের উপরে নির্যাতন করা হয়েছে, এগুলো না স্মরণে না রাখা উচিৎ হবে না। এসব ইতিহাস আমাদের জনাতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে। আমাদের উচিৎ হবে মুক্তিযুদ্ধের উপরে লেখা বইগুলো নিয়ে লাইব্রেরি করে মানুষকে সেগুলো পড়তে উৎসাহিত করা। প্রয়োজন পড়লে তাদেরকে শিক্ষিত করে তার পর এসব বই পড়াতে হবে।

গত ২৬ মার্চ সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন বিএলআরআই এর প্রথম পরিচালক ও একুশে পদক বিজয়ী বিজ্ঞানী কৃষিবিদ ডা. মির্জা এম. এ. জলিল।

অতীত জীবনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নানা পট পরিবর্তনের স্মৃতিচারণ করে এসময় তিনি আরও বলেন, ৭৫’র পরে দীর্ঘ ২৮ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিলো। এই ২৮ বছরে পাকিস্তানের পক্ষের আর বাঙ্গালীদের বিপক্ষের শক্তি চেষ্টা করে গেছে জাতিকে বিভ্রান্ত করার। এখনও সেই প্রচেষ্টা চলমান। তাদের এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে হবে। পাকিস্তানীরা যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে সবাই মিলে তার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। একুশে পদক অর্জনের কৃতিত্ব তিনি তাঁর সকল সহকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে তিনি এমন আয়োজনের জন্য বিএলআরআই এর বর্তমান মহাপরিচালককে ধন্যবাদ জানান।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই এর সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী মোঃ ইমদাদুল হক, ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান, ড. মোঃ নজরুল ইসলাম, ড. তালুকদার নূরুন্নাহার ও ড. নাথু রাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএলআরআই এর বর্তমান মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল জলিল।

ড. কাজী মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, আমি ভাগ্যবান এই জন্য যে একজন মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন দেখে যেতে পারছি। আজকের এই মহান দিনে আমি স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া সকল শহীদদের। তারা আত্মত্যাগ না করলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না, স্বাধীনতা না পেলে আমরা মহাপরিচালকের মত পদে নিযুক্ত হতে পারতাম না। একই সাথে এমন একটি আয়োজনের কারণে আজকের দিনটি আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, বঙ্গবন্ধুই দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। তিনিই ৭ মার্চ এবং পরবর্তীতে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও খাদ্যসমস্যা দূর করার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তারই হাত ধরে জননেত্রী শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দোরগোড়ায়। ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হয়েছে, দুগ্ধ খাতের  যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই দুধের চাহিদাও পূরণ হবে। তবে আয় বাড়ার সাথে সাথে প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের পরিমাণও বাড়বে। এই চাহিদা পূরণের জন্য প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য দ্রুতই সমন্বিত একটি গবেষণা ও সম্প্রসারণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

প্রধান অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ড. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নের্তৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিএলআরআই এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিলো কৃষিখাতের উন্নয়ন। এজন্য তিনি কৃষিবিদদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে গেছেন, বিএলআরআই এর কর্মরতরাও তার সুফলভোগী। গবাদিপশুর উৎপাদন বাড়ছে, প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনের পরিমাণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমোদের মাথায় রাখতে হবে আমাদের কী করণীয়, আমরা কী করছি, আমাদেরকে কী করতে হবে।

ড. তালুকদার নূরুন্নাহার প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের এই মহামিলন মেলায় আসতে পেরে আমি দারুন আনন্দিত। জাতির পিতার কন্যর নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে তাল মিলিয়ে বিএলআরআই-ও এগিয়ে যাবে। প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ নিশ্চিত করতে গবেষণার বিকল্প নেই। এর জন্য আপনাদেরকেই কাজ করে যেতেত হবে। যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে, নির্দিষ্ট সময়ে পালন করতে হবে।

ড. নাথু রাম সরকার এমন আয়োজনের জন্য বর্তমান মহাপরিচালেককে ধন্যবাদ চালিয়ে এই পরিবেশ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আনতে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। প্রতিবেশী যেকোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ খাতের বর্তমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ এর আগেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে প্রযুক্তির মধ্য দিয়েই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। নীতি-নির্ধারকদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবার যে লক্ষ্যমাত্রা তা পূরণ করা সম্ভব হবে।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএলআরআই’তে পালিত হয় মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। সকাল ৬.০০ ঘটিকায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল জলিল। এসময় মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই এর বিভাগীয় প্রধানগণ ও প্রকল্প পরিচালকগণ।

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএলআরআই এর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল জলিল এর নেতৃত্বে এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএলআরআই এর বিভাগীয় প্রধানগণ ও প্রকল্প পরিচালকগণসহ সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

বিকেলে বিএলআরআই এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। আলোচনা সভায় ।

আলোচনার সভার পরে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া মাহফিল। মাহফিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার, জাতীয় চার নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ হারানো ৩০ লক্ষ শহীদসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথে আত্মাহুতিদানকারী সকল বীরেদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বিএলআরআই এর প্রধান ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোতে আলোক সজ্জা এবং ১৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও রচনা লেখা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান। উল্লেখ্য দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিএলআরআই জাতির পিতার জন্মদিন ও শিশু দিবসের কর্মসূচি পালন করে।

This post has already been read 2823 times!

Check Also

ময়মনসিংহে তারুণ্যের সভায় মাদকমুক্ত জীবনের শপথ

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা: উন্নত সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার পথে অবদান রাখতে মাদকমুক্ত জীবনের শপথ নিয়েছে ময়মনসিংহের …