সমীরণ বিশ্বাস: ”আরটিভি কৃষি পদক-২০২১” এ সেরা কৃষি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান হসিাবে খ্রিষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) কে ”আরটিভি কৃষি পদক-২০২১” প্রদান করা হয় । পদক প্রদান অনুষ্ঠানে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এবং মৎস ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রী সহ আরো অনেক সুধিজন উপস্থিত ছিলেন। সিসিডিবি’র পক্ষে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার, সেরা কৃষি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানের পদকটি শক্তিমান অভিনেতা আজিজুল হাকিম এর থেকে গ্রহন করেন। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনিস্টিটিউট (ব্রি) কৃষি গবেষনায় সেরা প্রতিষ্ঠানের পদক পান। ইহাছারা সেরা কৃষানী, সেরা কৃষক, সেরা খামারি, (মৎস,গরু,মুরগী), সেরা উদ্যানচাষী এবং সেরা উদ্যোক্তা কেটাগরিতে আরো আট জন পদক লাভ করেন।
প্রতিষ্ঠানের পটভূমি : খ্রিষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) জাতীয় পর্যায়ের একটি নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান; যাহা ১৯৭৩ সাল থেকে ইকিউমেনিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন নিয়ে কাজ করে ১৯৭২ সাল থেকেই এই রিলিফের কাজ শুরু করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ জনগণের জন্য জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি সম্প্রসারণ, মানসম্মত বীজ উৎপাদন, মার্কেট ফ্যাসিলিটেশন, ভ্যালু চেইন তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ইত্যাদি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাপী কাজ করে আসছে।
সিসিডিবি সীড এন্টারপ্রাইজ
“সিসিডিবি সীড এন্টারপ্রাইজ” খ্রিষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি)-এর একটি বৃহৎ কর্মসূচী। এই কর্মসূচীটি ২০০০ সাল থেকে সিসিডিবি কৃষক পর্যায়ে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোকই কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলো Ñ ধান। আমরা সবাই জানি ভাতে মাছে বাঙালি, আর ভাত হলো আমাদের তথা বাঙালিদের প্রধান খাদ্য। খাদ্য ঘাটতি এই দেশে ধানের অধিক উৎপাদনের কোনো বিকল্প নাই, আর অধিক ফলন বা ধান উৎপাদনের বুনিয়াদ হলো : গুণগত মানের বীজ ধান। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ভালো বীজের চাহিদামাত্র ১২%-১৪% জিও, এনজিও এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান মিলে মিটানো সম্ভব হচ্ছিল। এই বাস্তবতা ও সত্যকে সামনে রেখে সিসিডিবি স্থানীয় পর্যায়ে সিসিডিবি সীড এন্টারপ্রাইজ, কৃষকের ব্যবসায়ী সংগঠন তৈরি গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করে। সিসিডিবি সীড এন্টারপ্রাইজের নিজস্ব ব্র্যান্ড “চাষীর হাসি”।
সিসিডিবি-এর এই কাজে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে-
- বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট
- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন
- বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সি
- বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়
- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট
- উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
- আইএনজিও (IRRI, CIMMYT, HervestPlus)
- বিভিন্ন এনজিও, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান
বস্তুত উল্লিখিত আপদকালীন অবস্থায় সিসিডিবি সাহায্য ত্রাণ, কৃষি পুনর্বাসন ও পুর্নগঠন কাজে সেই প্রথম থেকে অদ্যাবধি অগ্রযাত্রীর ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য জেলেদের উন্নয়নে প্রকল্প গঠন করে। এছাড়া দক্ষিণ অঞ্চলে জেলেদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমবায়ের ভিত্তিতে একাধিক আইস প্ল্যান্ট (বরফ কল) স্থাপন করা হয়, যা আজো বরিশাল, পটুয়াখালি, মানিকগঞ্জ এলাকায় সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলেরা পেয়েছে শত-শত জাল ও নৌকা।
১৯৮৪ সালে সিসিডিসি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি খুব বড় প্রকল্প চালু করে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় বৃহত্তর বরিশাল, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলে হাজার-হাজার কৃষককে কৃষিতে আধুনিক চাষাবাদ ও প্রযুক্তি প্রদানের লক্ষ্যে সেচ পাম্প এবং ট্রাক্টর বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। একই প্রকল্পের আওতায় কৃষিতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার হিসেবে সোলার পাম্প ব্যবহার ক’রে কৃষকরা সেচ কাজ সম্পন্ন করে। এর ফলে কৃষি উৎপাদনে এক বিপ্লব সাধিত হয়। বঙ্গবন্ধুর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনে সিসিডিবি আজও আধুনিক কৃষি এন্ড বীজ কর্মসুচী এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল দরিদ্রতা দূরীকরণ। তারই ধারাবাহিকতায় খ্রীষ্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) ১৯৭২ সাল থেকে প্রথমে সেক্টরাল অর্থাৎ একমুখী, তারপর বহুমুখী, জনমুখী তারপরে সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (সিপিআরপি) নামে ৬০ হাজার উপকারভোগীর কৃষক পরিবারের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সারা বাংলাদেশে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ক’রে চলেছেন। উক্ত প্রকল্পের আওতায় কৃষি উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, নারী সমতা, নারী শিক্ষা, সঞ্চয়, সংগঠন তৈরি, নেতৃত্বের বিকাশÑউন্নত চুলা ব্যবহার, আয়-বৃদ্ধি এবং সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে একটি পূণাঙ্গ মর্যাদাসম্পন্ন সমাজ গঠনের জন্য কাজ ক’রে যাচ্ছে। সমতা, শান্তিপূর্ণ, দায়িত্বশীল ও যতœবান সমাজ গঠনে সরকারের পাশাপাশি সিসিডিবি সেই ১৯৭২ সাল থেকে আজ অবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ ক’রে চলেছে এবং ভবিষ্যতে একাজ অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা রাখে।
লেখক: কোঅর্ডিনেটর, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড সীড প্রোগ্রাম, সিসিডিবি।