ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা : দেড় বছর অপেক্ষার পর দেশে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে ভেনামি চিংড়ি চাষ। খুলনার পাইকগাছায় হোয়াইট গোল্ড বা সাদা সোনা নামে পরিচিত এ চিংড়ি চাষের জন্য সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাইকগাছায় ১ মিলিয়ন ভেনামি চিংড়ির পোনা পৌঁছেছে।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র সূত্র বলছে, ভেনামি জাতের চিংড়ি বেশ লাভজনক। এজন্য এ প্রজাতির চিংড়ি চাষ করতে কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। এ প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন এবং এমইউসি ফুডসকে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয় সরকার। তবে নানা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ শুরু করা যাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার থেকে সেই অনিশ্চয়তা দূর হয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ভেনামি জাতের চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে ১ মিলিয়ন ভেনামি চিংড়ির পোনা আমদানি করা হয়েছে। সেই পোনা পরীক্ষামূলকভাবে চাষের জন্য খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় নেয়া হয়েছে। চিংড়ি পোনা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের পরীক্ষাগারেও নেয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর পাইকগাছার লবণ পানি গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হবে।
পাইকগাছার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চাষের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ কাজে আমরা তাদের সহায়তা করছি। পরিবেশের ক্ষতি রোধে পাইকগাছা লবণ পানি গবেষণা কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। প্রথমে একটি পুকুরে ও পরে চারটি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষ করা হবে।
চিংড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ বছরে একবারের বেশি করা যায় না। আর ভেনামি চিংড়ির চাষ বছরে তিনবার করা যায়। সাধারণ পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে সাত-আট হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। ভারতে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর সময় লাগলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লাগবে তিন বছর।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, চিংড়ির বিশ্ববাণিজ্যে ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি। অনেক দেশ এ প্রজাতির চিংড়ি চাষ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করছে। এ অঞ্চলে ভেনামি চাষের সফলতা পেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চিংড়ি বেশ ভূমিকা রাখবে।