নিজস্ব প্রতিবেদক: “কোভিডকালে মাছ মাংস, দুধ ও ডিমের সরবরাহ জরুরি সরবরাহ। এটা কোনভাবে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। এটা বাধাগ্রস্ত হলে উৎপাদক, বিপণনকারী ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এজন্য মাছ মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদন, আহরণ, পরিবহণ, ও ক্রয়-বিক্রয়ে বাধা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলে সহযোগিতা করতে হবে।”
সোমবার (০৫ এপ্রিল) জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে করোনা সংকট মোকাবিলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি। দেশের ইলিশ সম্পদের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এ সময় মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকারের সঞ্চালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালন ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, জাটকা সম্পৃক্ত ৬টি জেলা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, নৌপুলিশ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, র্যা ব ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির প্রতিনিধিগণ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তাগণ ভার্চুয়ালি সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় তিনি বলেন, “দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। অথচ অবৈধভাবে জাটকা আহরণের নেপথ্যে কিছু মানুষ কাজ করছে। অবৈধ মৎস্য আহরণে যে ট্রলারগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণ মৎস্যজীবীদের নয়, কিছু ধনী অসাধু ব্যক্তির। তারা সমাজ ও দেশের শত্রু। পুষ্টিকর মাছ ইলিশ যাতে বৃদ্ধি করা না যায় সেজন্য তারা কাজ করে। অনেক সময় বিষাক্ত দ্রব্য নির্গমন, অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে না। এভাবে নানা রকম ক্ষতিকর ভূমিকায় বিভিন্ন সেক্টরের অসাধু ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত রয়েছে। এগুলো বন্ধে ইলিশের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মনিটরিং ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদের যারা শত্রু তাদের ব্যাপারে কোন তদবীর শোনা হবে না। এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।”
এ সময় তিনি আরো বলেন, “ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করা হবে। অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচালিত অভিযানে অত্যাধুনিক জলযান সংযোজনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। তবে ইলিশ রক্ষায় বিদ্যমান সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা না গেলেও বিদ্যমান জনবল ও নৌযান দিয়ে সমস্যা মোকাবিলার আপাতত চেষ্টা করতে হবে। এর স্থায়ী সমাধানে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
কোভিডকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ জন্য শাক-সবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস, দুধ, ডিম পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে হবে। এ মূহুর্তে করোনার ভয়াবহ বৈশ্বিক সমস্যা আমাদের দেশের অভ্যন্তরে মোকাবিলা করতে মাছ, মাংস, দুধ ডিম এর উৎপাদন ও বিপণন বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে ইলিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। ইলিশ উৎপাদনে আমরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্থানে রয়েছি।”
মন্ত্রী আরো জানান, “মৎস্যজীবীদের কল্যাণে সব জায়গায় সরকার কাজ করছে। মৎস্যজীবীদের তালিকা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন তাদের তালিকায় রাখা হবে না, যারা নতুন করে এ পেশায় যুক্ত হয়েছেন তাদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। একসময় ১০ কেজি করে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ চাল দেওয়া হতো, এখন সেটা ৪০ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে।”
নৌপুলিশের অভিযানে গত বছর ২৯ কোটি মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করা একটা বড় সাফল্য উল্লেখ করে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে নিয়োজিত নৌপুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।
পরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে এটি সফল ও সার্থকভাবে উদযাপন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।