নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছর (২০২০-২১ সন) ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে ৫০০টি উপজেলায় ১৬১৭টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৭০১টি রিপার, ১৮৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ মোট ৫ হাজার ৭৭৬টি বিভিন্ন ধরণের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মাঝে বিতরণ করবে সরকার। এর মধ্যে হাওরে ধান সফলভাবে কাটার জন্য ৫১০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ২৩১টি রিপার বিতরণ করা হচ্ছে। ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ -২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে কৃষকের মাঝে ‘কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র’ বিতরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে, কৃষি উন্নয়নে ও খামার যান্ত্রিকীকরণে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে বলে মন্তব্য করেন এ সময় কৃষিমন্ত্রী
ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১০-১৫ বছর আগেও বাংলাদেশের কৃষি ছিল সনাতন পদ্ধতির। চাষাবাদ, মাড়াইসহ সব কাজ মানুষকে শারীরিকভাবে করতে হতো। লাঙলে চাষ হতো। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে জমি চাষ ও ফসল মাড়াই হচ্ছে। কিন্তু ধান কাটা ও রোপণ মানুষকে করতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ অনেক বেশি ও সময় সাপেক্ষ। সেজন্য বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছর ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫০% ও হাওর-উপকূলীয় এলাকায় ৭০% ভর্তুকিতে কৃষকদেরকে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব ঘটবে। বাংলাদেশের কৃষিও পশ্চিমা বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশের কৃষির মতো উন্নত ও আধুনিক হবে।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে কৃষিতে সরকারের মূল লক্ষ্য হলো কৃষিকে আধুনিকায়ন ও লাভজনক করা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিকায়ন ও লাভজনক করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্প হলো তার অনন্য উদাহরণ। এর মাধ্যমে কৃষি লাভজনক হবে ও গ্রামীণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়।
অনুষ্ঠানে নেত্রকোনা থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন ও কৃষিযন্ত্র বিতরণ করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু এমপি। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ড. মো: আবদুর রৌফ, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো: রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মোঃ মাহবুবুল ইসলাম, মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা) মোঃ আব্দুল কাদের এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইড় থেকে যুক্ত হন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মনিরুল আলম ও প্রকল্প পরিচালক বেনজীর আলম। এছাড়া, ১৩টি কৃষি অঞ্চলের ১৩টি উপজেলা থেকে প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা ও কৃষক ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিতে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলেই কৃষিতে আজকের সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর সরকার দ্রুততার সাথে ভর্তুকির মাধ্যমে ধান কাটার যন্ত্র দিয়েছিল, ফলে হাওরের ধান সফলভাবে ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছিল। সরকার এ বছরও কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ করছে। আশা করি, এবারও সফলভাবে ধান ঘরে তোলা যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ তাঁর বক্তব্যে জানান, ৪৮ লাখ হেক্টর জমির বোরো ধানের পুরোটা যন্ত্র দিয়ে কাটতে পারলে ৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।