শহীদ আহমেদ খান (সিলেট) : সিলেটে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা। জেলার বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে কৃষক পতিত পুকুর কিংবা বিলে কচুরিপানা পচিয়ে বেড তৈরি করে এর ওপর নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে আবাদকৃত সবজির ফলনও ভালো হচ্ছে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভাসমান সবজি চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তাও প্রদান করছে। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সিলেটের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলার কৃষকরা এগিয়ে এসেছেন। এর মাধ্যমে কৃষকরা পারিবারিক চাহিদা মিটানোর পর উদ্বৃত সবজি ও মসলা বাজারে বিক্রী করে লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) সিলেট এর সহযোগিতায় সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় শুরু হয়েছে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ প্রকল্পের কাজ।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রূপশাল গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন গত ৩বছর যাবত এই পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আবুল হোসেন এর ভাসমান বেড সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ভাসমান বেড তৈরি করে তার ওপর চাষ করছেন টমেটো, বেগুন, কাচা মরিচ, লাল শাক, কলমি শাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, লাউ ও সিম। যা একদিকে তাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। আবুল হোসেন এর ভাসমান বেডে সবজি চাষ দেখে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সিলেটের সহযোগিতায় “ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ” প্রকল্পের আওতায় ভাসমান বেড তৈরি করে তাতে নানা জাতের সবজির চাষ অব্যাহত রেখেছি। আগামীতে আরও বেশি বেড তৈরি করে সবজি চাষ করবেন বলে তিনি জানান। ২০ ফুট গভীর পানির ওপর ভাসমান বেড করা খুবই কষ্টসাধ্য। কষ্ট হলেও আমরা সাফল্য পেয়েছি। বাজারে এই বেডের সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ভাসমান বেডের তত্তাবধানের নিয়োজিত বৈজ্ঞানিক সহকারী রায়হান বলেন, একই বেডে এক সবজি তোলার পর অন্য সবজি চাষ করা যায়। ভাসমান বেডে উৎপাদিত সবজি জৈব পদ্ধতিতে তৈরি হয় বলে প্রযুক্তিটি পরিবেশ বান্ধব ও সবজি স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত। তাছাড়া খরচও তুলনামূলক কম। ফলে কৃষক বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) সূত্রে জানা যায়, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সিলেটের ব্যবস্থাপনায় ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ভাসমান বেডে কৃষকদের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষকদের সব ধরণের কলাকৌশলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং চাষাবাদ প্রক্রিয়া হাতে কলমে শেখানো হয়। সবকিছু জেনে নেয়ার পর কৃষকরা ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ শুরু করেন। একজনের সফলতা দেখে অন্যজন একি রকম চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এখন পর্যন্ত সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রূপশাল এবং ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর গ্রামে প্রাথমিক ভাবে বিনামূল্যে তৈরি ১৫০টি বেডের মাধ্যমে এসব এলাকায় সবজি ও মসলা উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত চাষে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার লাগেনা। ফলে সবজির গুনগত মান ও স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে। তিনি আরো জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায়ও ভাসমান বেডে সবজি চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
রূপশাল গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, এ পদ্ধতিতে একই বেডে এক সবজির পর অন্য সবজি চাষ করা যায়। সবজি খেতে স্বাদ বলে বাজারের অন্য সাধারণ সবজির চেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। তাছাড়া খরচও তুলনামূলক কম। ফলে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) সিলেটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল ইসলাম নজরুল বলেন, সিলেটের অনেক পুকুর এবং খাল-বিল প্রায় সারা বছরই পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এসব জায়গায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে এর ঘাটতি পূরণ সহ আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা। সিলেট অঞ্চলে এখনো সবজির প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। তাই সিলেটে ভাসমান বেডে পানির স্বল্প খরছে সবজি চাষ ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেলে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে আর্থিক ভাবেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা মতে, দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমির ব্যবহার ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের বিবেচনায় ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা উৎপাদন পদ্ধতি বিস্তার প্রয়োজন। কৃষি বান্ধব সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকদের কল্যাণে এ পদ্ধতির সবজি ও মসলা চাষে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।