ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটের নাম করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনা মহামারির এ কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষ বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছিলো। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণিজ প্রোটিন তথা পুষ্টি সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিলো। এমন অবস্থার কথা চিন্তা করে ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ এর আওতায় ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে মানুষের বাড়ি বাড়ি মাছ বিক্রির এক যুগান্তকারী সিধান্ত গ্রহণ করেন এবং গ্রামীণ পর্যায়ে প্রাণিজ পুষ্টির সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রয়াস চালান যা সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হতে পিও র মাধ্যমে ভ্রাম্যমান মাছ বিক্রির কার্যক্রমে শামিল হয় এবং নিজ নিজ এলাকায় পুষ্টির যোগান দিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলায় ভ্রাম্যমান নিরাপদ মাছ বাজারের মাধ্যমে মাছ বিক্রি স্থানীয় পর্যায়ে বেশ সাড়া জাগায় এবং ডুমুরিয়ায় প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২.৫ থেকে ৩.০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ১৮ লক্ষ ৬২ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। এতে করে সিআইজি ও নন-সিআইজি মৎস্যচাষীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ঘরে বসে মাছের সরবরাহ পেয়ে বেশ উপকৃত হচ্ছেন। তবে এ সফল গল্পের শুরুটা এত মসৃণ ছিল না, অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে।
এ উদ্যোগের অগ্রসৈনিক সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আবুবকর সিদ্দিক বলেন, “যেহেতু ভ্রাম্যমান নিরাপদ মাছ বাজার একটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের আইডিয়া তাই প্রথমে মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না তবে পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভ্রাম্যমান নিরাপদ মাছ বাজার উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক সাড়া পায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ৩১ লাখ টাকা (৫০ কোটি ৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার) আয় করেছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ চিংড়িসহ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানি হয়। রপ্তানিতে তৈরী পোশাকের পরপরই চিংড়ির অবস্থান। কিন্তু বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির যে প্রভাব তার আচঁ বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিতেও লাগে। চিংড়িসহ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং দামও কমে যায়।
একদিকে করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ অন্যদিকে লকডাইনে দেশব্যাপী মাছ পরিবহনে নানাবিধ সমস্যা। এমন জটিল পরিস্থিতিতে প্রান্তিক মাছ চাষীরা তাদের চাষকৃত মাছ বিক্রি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমন সময়ে এনএটিপি-২ এর আওতায় পিও এর মাধ্যমে ভ্রাম্যমান নিরাপদ মাছ বাজারের আইডিয়া নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হয় ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য দপ্তর।
প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন যেহেতু সরাসরি চাষীর নিকট থেকে মাছ নিয়ে ক্রেতার দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে ফলে ভ্যালু চেইন সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে চাষীর ন্যায্য মূল্য যেমন নিশ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যাচ্ছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন স্কুল শিক্ষক ভোক্তা মো: হায়দার আলী বলেন, লকডাউনের মধ্যে বাসায় বসে এভাবে তাজা মাছ কিনতে পারবো কখনোও ভাবিনি। সুন্দর উদ্যোগের জন্য মৎস্য বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই।
পিও, সিআইজি ননসিআইজি মাছচাষীদের নিকট থেকে ন্যায্য মূল্য প্রদানের মাধ্যমে মাছ ক্রয় করে, পরবর্তীতে সে মাছ অটো ভ্যানে করে পিও ম্যানেজারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভোক্তাদের দোর গোড়ায় বিক্রি করা হয়।
পিও র মাধ্যমে ভ্রাম্যমান নিরাপদ মাছ বাজার এ উদ্যোগকে সফল করার জন্য সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব মো: আবুবকর সিদ্দিক, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা চিত্ত রঞ্জন পাল, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো: রায়হানুল হাসান, ফিল্ড এসিটেন্ট গণ এবং পিও অফিস ম্যানেজার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।