নিজস্ব প্রতিবেদক: ফলন বাড়িয়ে ধানের জমির ব্যবহার প্রায় ৬০ ভাগে আনতে চায় দেশের কৃষি সেক্টরের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি এসিআই লিমিটেড। এজন্য কোম্পানিটি গত কয়েক বছর গবেষণার মাধ্যমে উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ধানের দুটি জাত ও হাইব্রিড ধানের একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। হাইব্রিড ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চায়।
এ সম্পর্কে এসিআই এগ্রিবিজনেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে হেক্টরপ্রতি ধানের যে ফলন এসিআই উদ্ভাবিত হাইব্রিড ও ইনব্রিড ধান ব্যবহারের মাধ্যমে সেটির উৎপাদন প্রায় ৪০ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এর ফলে আমাদের বর্তমানে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন হয়, একই পরিমাণ উৎপাদনের জন্য সেক্ষেত্রে প্রায় ৪০ ভাগ জমি কম লাগবে।
‘এর ফরে আমাদের এই উদ্বৃত্ত্ব জমিতে অন্যান্য ফল-ফসল আবাদ করা যাবে। দেশে প্রাণিজ আমিষ খাতে নীরব বিপ্লবের কারণে ভুট্টার চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব জমির একটি অংশ আমরা তখন ভুট্টা চাষে ব্যবহার করতে পারবো। এছাড়াও প্রতি বছর কয়েকশ’ কোটি টাকার তেল ও ডালজাতীয় শস্য আমদানি করতে হয়। আমরা এসব জমিতে সেগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারবো। দেশে ফল চাষের বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমরা ফল চাষের জন্য এসব জমির একটি অংশ ব্যবহার করতে পারবো। মোট কথা, বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের সরকারের যে লক্ষ্য সেটিতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত চায় এসিআই’ যোগ করেন ড. আনসারি।
তিনি জানান, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধানের গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৫ টন ও ইনব্রিড ধানের ফলন ১০ টন করার গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এসিআই।এছাড়াও প্রিমিয়াম টাইপ, বিশেষ করে লম্বা সুগন্ধি ধান, ছোট সুগন্ধি ধান—কাটারিভোগ ও ছোট সুগন্ধি ধান—চিনিগুঁড়া, বেসিক টাইপ যেমন আমন, বোরো, স্বর্ণা ও হাইব্রিড ধান নিয়ে একদল বিজ্ঞানী কাজ করছেন বলে জানান তিনি। এর নেতৃত্বে আছেন ধান বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুস সালাম। এরই মধ্যে এসিআই উন্নত মানের গবেষণাকাজ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত করেছে উচ্চমানের মলিকুলার ল্যাব, জিন ব্যাংক, গ্রিনহাউজ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গবেষণা মাঠ, যেখানে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে গবেষণায় উদ্ভাবিত শতাধিক ধানের লাইন মাঠ পর্যায়ে মূল্যায়ন চলছে।
বুধবার (২১ এপ্রিল) এসিআইয়ের গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহাজান কবির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস) একেএম মনিরুল আলম ও অতিরিক্ত পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) কৃষিবিদ বশীর আহম্মদ সরকার। গাজীপুরের মাওনায় এসিআইয়ের গবেষণা মাঠ পরিদর্শনের সময় বিস্তারিত জানান এসিআই সিডের বিজনেস ডিরেক্টর সুধীর চন্দ্র নাথ ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, এসিআই ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) যৌথভাবে অর্ধদশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসিআই এরই মধ্যে উচ্চফলনশীল ইনব্রিড ধানের দুটি জাত রাবি ধান – ১ ও বাউ ধান – ৩ এবং হাইব্রিড ধানের একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে চাষবাদ হচ্ছে। এছাড়া আরো আনেক নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে, যেগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য উচ্চফলনশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বল্প জীবত্কালসম্পন্ন, জিংকসমৃদ্ধ, জলবায়ুসহিষ্ণু এবং ব্লাস্ট রোগ ও ব্যাক্টেরিয়াল ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। শিগগিরই উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো কৃষক পর্যায়ে দেয়া হবে।