ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় আবাসন প্রকল্প ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সদ্য খননকৃত সরকারী খালে বাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড টানিয়ে প্লট আকারে জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিলেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ওই জমি বালি দিয়ে ভরাটের অনুমতির আবেদন করেছেন। অনুমতি না পেলেও শুরু করেছেন বালি ভরাট ও খালে বাঁধ দেয়ার কাজ। এলাকাবাসী বাঁধ দেয়া ও কালভার্ট নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিনে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা গুটুদিয়া গ্রামের ভেলকামারি, জিলেরডাঙ্গা, বড়ডাঙ্গা, মির্জাপুর, সজিয়াড়া,বিল পাবলাসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের খাল আঁড়ো দোয়ানিয়া খাল। দোয়ানিয়া খাল,ঝিনাইগাতী খাল,লাইন বিল পাবলা খাল ,বাঁশতলা খাল,সাইন ফোরের খালসহ অসংখ্য ছোট বড় সরকারী খাল ইতোপূর্বে ভরাট করে বিক্রি করে দিয়েছে,আবাসন প্রকল্পের মালিক বনে যাওয়া ভুমিদস্যু চক্র। ডুমুরিয়া কেন্দ্রীক এ ভুমিদস্যু চক্রের সাথে রয়েছে স্থানীয় তহসীল অফিস,ও ডুমুরিয়া ভুমি অফিসের কানুনগো হায়দর আলী মিয়া,নাজির কাম ক্যাশিয়ার কিরণ বালা, সার্বেয়ারসহ ভুমি অফিসের একটি শক্তিশালি চক্র । এই চক্রের সহযোগিতায় ডুমুরিয়ার অধিকাংশ সরকারী জমি ও ছোট বড় খালের আজ কোন অস্তিত্য নেই । স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ ডুমুরিয়া ভুমি অফিসের দুর্নীতিবাজ হায়দর আলী মিয়া ও নাজির কিরণ বালার জ্ঞাত আয়বহি ভূত সম্পদের বিষয়ে দুদক তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা নিক ।
ডুমুরিয়ার খাল রক্ষায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারয়ন চন্দ্র চন্দের একান্তিক চেষ্টায় মৎস্য বিভাগ কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ এই খালসহ কয়েকটি খাল খনন করে। ফলে বর্ষা মৌসুমে সালতা ও শোলমারি নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে শোলমারি স্লুইজগেট দিয়ে সালতা নদী হয়ে কোমলপুর স্লুইজ গেট হয়ে এই খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করে জিলেরডাঙ্গা স্লুইজ গেট দিয়ে পানি বেরিয়ে যায়। খালের এই পানির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে কয়েক শত চিংড়ি ও মৎস্য ঘের। খালের পাড়ে অনেকেই মাছের ঘের করে ও সবজির আবাদ করে থাকে। কিন্তু খুলনা শহরের জনৈক ব্যক্তি বুধবার (২১ এপ্রিল) খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্র্যাক হ্যাচারীর সম্মুখের এই খালে পশ্চিম প্রান্তে গাছের গুড়ি বসিয়ে এবং প্রায় একশো হাত পুর্ব দিকের বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে রাস্তা তৈরি করছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ভুমিদস্যু চক্রকে বাঁধ দিতে নিষেধ করলে তারা তা শোনেনি। পরে এলাকাবাসী ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে প্রশাসন ২১ এপ্রিল সকালে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিলে তারা প্রথমে কাজ বন্ধ রাখলেও পরে অদৃশ্য শক্তি বলে দুপুরে পুনরায় সেখানে বাঁধ দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ওই জমির মালিক খুলনা শহরের বাসিন্দা আবুল ফয়সাল মো. সায়েম গত ৭ এপ্রিল খুলনা জেলা প্রশাসকের দফতরে এই মর্মে একটি আবেদন করেছেন যে তিনি পতিত জমিতে গরুর খামার করতে চান। সেখানে বালি দ্বারা ভরাট করতে এবং সদ্য খননকৃত খালটিকে নালা উল্লেখ করে কালভার্ট করার অনুমতি চেয়েছেন। অথচ কয়েকদিন আগে থেকে ওই জমিতে তাহমিদ এন্ড আনাস প্রোপার্টিস এবং আবরার প্রোপার্টিস নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে ‘প্লট আকারে জমি বিক্রয় চলছে। ওই বিলে আমন ধান ও বোরো ধান, সবজিসহ নানা কৃষি পন্য উৎপাদিত হয়।
জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া ওই দরখাস্তটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে মার্ক করা হয়েছে। দরখাস্তে তিনি যে তথ্য উল্লেখ করেছেন সেটি সত্য নয়। সে হিসেব তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কোন রকম অনুমতি না নিয়েই তিনি আইনের তোয়াক্কা না করে কাজ শুরু করেন। খালে বাঁধ দিয়ে কালভার্ট নির্মাণ কাজ তদারকির কাছে নিয়োজিত হাবিবুল হাসান সুজনের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের অনুমতির জন্যে ডিসি স্যারের কাছে জমির মালিক একটি আবেদন পত্র জমা দিলে তিনি বিষয়টি ইউএনও সাহেবকে মার্ক করেছেন। কিন্ত করোনাকালিন লকডাউনে অফিস বন্ধ থাকায় আবেদনটি ইউএনও সাহেবের কাছে জমা দিতে পারিনি। শুষ্ক মৌসুম থাকতে কালভার্ট নির্মাণ করতে খালে সাময়িক সময়ে বাঁধ দিয়ে কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আবু বক্কার সিদ্দীক জানান, স্থানীয় জনসাধারণের ধান, মাছ, সবজিসহ কৃষিজ পন্য উৎপাদনে সুষ্ঠুদ পানি ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য বিভাগ গত বছর খালটি খনন করে। প্রতিদিন ওই খালে দু’বার জোয়ার ভাটা হয়ে থাকে। খালে বাঁধ দিয়ে নিয়ম বর্হিভূত ভরাট করা বা কালভার্ট নির্মাণ বেআইনী। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে কৃষি জমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বা অন্য কোন কোন স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। এটি করা হলে সেটি অপরাধ।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সংশ্লিষ্ট ওই প্রবাহমান খালে কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য কেউ আবেদন করেনি। তাছাড়া প্রবাহমান খালে পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এমনকি কৃষি জমি ভরাট করার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর নিষেধ রয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। খালে বাঁধ দেয়ার খবর পেয়ে ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, প্রবাহমান খালে বাধঁ দেয়া ও কৃষি জমি বালি দিয়ে ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারী খাসজমি ও খাল ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ সম্পর্কে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।